নিজস্ব প্রতিবেদক রাজশাহী:
রাজশাহীর মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলামের শাস্তির দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছেন স্কুলের শিক্ষার্থীরা।
রোববার (১৮ আগষ্ট) দুপুরের দিকে টিফিন পিরিয়ডে প্রায় একশত শিক্ষার্থী রাজশাহী-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে নানা অনিয়ম দূর্ণিতির অভিযোগে অভিযুক্ত ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলামের শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগানে প্রায় ৪০ মিনিট সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এসময় সড়কে চলাচলকারী রোগী বহনকারী যানবাহন ব্যতীত সকল প্রকার যানবাহন আটকে দেন শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীরা একদফা দাবিতে”একদফা একদাবি, সাইফুল তুই কবে যাবি। ঘুষখোর ঘুসখোর, সাইফুল তুই ঘুসখোর, এক দুই তিন চার, সাইফুল তুই স্কুল ছাড়” স্লোগানে তারা সড়ক অবরোধ করে রাখেন এবং সড়কের দুইধারে বিভিন্ন প্রকার যানবাহন আটকে পড়ে। শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে মোহনপুর থানা ওসি হরিদাস মন্ডল সেনাবাহিনীকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন এবং সড়ক অবরোধ না করতে শিক্ষার্থীদের বোঝান। তারপর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুজিত কুমার দেবনাথ চার শিক্ষককে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে শিক্ষার্থীদের ক্লাশে ফেরার অনুরোধ জানান তাতে কাজ না হওয়ায় সেনাবাহিনীর অফিসার শিক্ষার্থীদের কথা শুনে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিলে ক্লাশে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষার্থী এ প্রতিবেদককে জানান যদি প্রধান শিক্ষক তাদের দাবি না মানেন তাহলে শিক্ষার্থীরা আবারো অভিযুক্ত শিক্ষক সাইফুলের শাস্তির দাবিতে সড়কে ফিরে আসবেন।
স্কুলে কর্মরত কিছু শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সড়ক অবরোধের ঘন্টা খানেক আগে অভিযুক্ত শিক্ষক সাইফুল স্থানীয় কিছু সাংবাদিকদের দিয়ে অন্যান্য শিক্ষককে অনিয়মের ট্যাগ লাগাতে স্কুলে ডেকে আনেন এতে আরো ক্ষিপ্ত হন শিক্ষার্থীরা। সড়ক অবরোধের বিষয়টি আগে থেকেই জানত প্রধান শিক্ষক সুজিত কুমার দেবনাথ তারপরও তিনি শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ থামাতে পারেননি বলে সড়কে যানবাহন চলাচল জনদূর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। যার দ্বায়ভার প্রধান শিক্ষকের।
এবিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুজিত কুমার দেবনাথ বলেন, সেনাবাহিনী ও আমরা শিক্ষার্থীদের কথা শুনে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিলে ক্লাশে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা।
উল্লেখ্য: ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে নিয়ম বর্হিভূতভাবে লাখ টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থী ভর্তি, পাঠদানে ফাঁকি, ১৮ বছর একই জায়গায় চাকুরি, শিক্ষার্থীদের সাথে অশালীন আচরণ, অকারণে শিক্ষার্থীদের সাসপেন্ড ও টিসি দেওয়া, স্কুল ফান্ডের সরকারি টাকা আত্মসাত, উর্ধতন কর্মকর্তার নামে শিক্ষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে অন্যত্র বদলী, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় ফেল দেখিয়ে মিউচুয়াল ট্রান্সফার বানিজ্যসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে রাজশাহী জেলা প্রশাসক বরাবর দশজন শিক্ষার্থী অভিভাবকের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ৮ জুন বিভিন্ন গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি উপজেলা প্রশাসনের শিক্ষা কমিটির সভাপতি ইউএনও আয়শা সিদ্দিকা’র দৃষ্টিগোচর হলে তিনি বিষয়টি তদন্তে গত ৯ জুন রোববার উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসার ডাঃ খন্দকার সাগর আহম্মেদকে আহবায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত কমিটিকে সাত কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও সরকারি বিভিন্ন কর্মকান্ডের ব্যস্ততায় আজও তদন্ত প্রতিবেদন জমা হয়নি। এদিকে অভিযুক্ত শিক্ষক সাইফুলের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হলে তিনি নিজেকে বাঁচাতে ওই স্কুলে কর্মরত বিভিন্ন শিক্ষকের কাছে তিনি ভাল শিক্ষক মর্মে প্রত্যায়নপত্রে স্বাক্ষর চান। তা না পেয়ে গত ২০ জুন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর মহাপরিচালক বরাবর বদলির আবেদন জানান।