অপরাধ

একজনকে মারলে প্রমাণিত হওয়ার ভয়ে ৭জন খুন।

মোঃ হোসেন গাজীঃ
র‍্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে যা বললেন, সেভেন মা’র্ডারের মাস্টারমাইন্ড আকাশ মণ্ডল। বেতন পাই না কয়েক মাস। আবার চাইলেও গালমন্দ করতেন জাহাজের মাস্টার কিবরিয়া। এটা দেখেও জাহাজের অন্যরা কেউ প্রতিবাদ করত না। তাই রাগে ক্ষোভে সবাইকে জাহাজেই মে-রে ফেলেছি। একজনকে মা-রলে সমস্যা, তাই সাতজনকেই মে-রে ফে-লেছি।’ র‍্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে এভাবেই চাঁদপুরের মেঘনায় সার বহনকারী এমভি আল বাখেরা জাহাজে লোমহর্ষক সেভেন মা-র্ডারের বর্ণনা দেন আকাশ মণ্ডল ইরফান ২৫ ডিসেম্বর বুধবার আটক আকাশ মণ্ডলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে র‍্যাব-১১ কুমিল্লা সিপিসি-২। আকাশ মণ্ডল ইরফান বলেন, দোকান থেকে ঘুমের ওষুধ কিনেছি। এরপর বাবুর্চি রান্না করে রেখে যাওয়ার পর সে খাবারগুলোতে ঘুমের ওষুধ মেশাই। সন্ধ্যায় যখন সবাই খেয়ে কেবিনগুলোতে ঘুমাচ্ছিল তখন মাস্টারকে দিয়ে হ-ত্যার মিশন শুরু করি। চায়নিজ কুড়াল দোকান থেকে কিনেছিলাম। মা-রার পর ওইটা জাহাজেই ফেলে এসেছি। মা-রব বলে ওই রাতে আমি খাবারও খাইনি।জাহাজের কর্মী আকাশ মণ্ডল আরও বলেন, শেষে জুয়েলের গ-লা কা-টি। ছুরিটা বাবুর্চির কেবিন থেকেই নিয়েছি। ও কীভাবে বাঁচলো তা জানি না। পালালেন কীভাবে এমন প্রশ্নের জবাবে ইরফান বলেন, ওখানে তো সব চর। মাঝের চরে নামলে রাস্তা দেখতে পাই। সেখানে হাত-মুখ ধুয়ে বিকাশে টাকা ছিল তা উঠিয়ে পোশাক কিনে জেলেদের ট্রলারে করে পালিয়ে চলে যাই। প্রমাণ লোপাটের চেষ্টায় রক্ত-মাখা পোশাক খুলে ফেলি এবং পরে নতুন জামা কিনে সেটা পরি। আমার বোনদেরও জানাইনি। ভাবছিলাম কোথাও দূরে চলে যাব। আমার এ অপরাধে আর কেউ জড়িত নেই। এর আগে বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে চাঁদপুরের হাইমচরে মেঘনা নদীতে সার বহনকারী এমভি আল বাখেরা জাহাজে ৭ জন খু-নের ঘটনায় আসল রহস্য উদ্‌ঘাটন হয়েছে বলে জানান র‍্যাব ১১-এর উপ-অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন। কুমিল্লায় র‍্যাব-১১ কুমিল্লা সিপিসি-২ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি। মেজর সাকিব হোসেন বলেন, সাত খুনের ঘটনায় জাহাজের কর্মী আকাশ মণ্ডল ইরফানকে বাগেরহাটের চিতলমারী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বেতন-ভাতা না পাওয়া ও দুর্ব্যবহারের ক্ষোভ থেকে সবাইকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে আকাশ মণ্ডল ইরফান জাহাজের মাস্টার গোলাম কিবরিয়াসহ সবাইকে হ-ত্যা করে। খু-ন হওয়া ব্যক্তিরা হলেন- মাস্টার গোলাম কিবরিয়া, গ্রিজার সজিবুল ইসলাম, লস্কর মাজেদুল ইসলাম, শেখ সবুজ, আমিনুর মুন্সী, ইঞ্জিনচালক সালাউদ্দিন ও বাবুর্চি রানা কাজী। এ ছাড়া আহত ব্যক্তি হলেন- সুকানি জুয়েল। তিনি আরও বলেন, জাহাজের মাস্টার গোলাম কিবরিয়া দীর্ঘ ৮ মাস ধরে কোনো ধরে বেতন-ভাতা দিতেন না। এমনকি তিনি দুর্ব্যবহার করতেন। এসবের ক্ষোভ থেকে আকাশ মণ্ডল ইরফান সবাইকে হত্যা করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইরফানের দেওয়া তথ্যে মেজর সাকিব হোসেন জানান, জাহাজের বাজার করতে ইরফান পাবনার একটি বাজারে নেমেছিল। সেখান থেকে তিনি তিন পাতা ঘুমের ওষুধ কেনেন। আর যে চায়নিজ কুড়াল দিয়ে সবাইকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় সেটি আগেই জাহাজে ছিল। কুড়ালটি জাহাজের নিরাপত্তার জন্য রাখা হয়েছিল। র‍্যাবের এ কর্মকর্তা আরও জানান, হ-ত্যার দিন রাতের খাবার রান্নার সময় ইরফান জাহাজের বাবুর্চির অগোচরে খাবারের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেন। সে খাবার খেয়ে সবাই অচেতন হয়ে পড়লে হাতে গ্লাভস পরে চায়নিজ কুড়াল দিয়ে সবাইকে কু-পিয়ে হ-ত্যা করে ইরফান। সাকিব হোসেন জানান, ইরফান যখন সবাইকে কু-পিয়ে হ-ত্যা করে তখন জাহাজ মাঝ নদীতে নোঙর করা ছিল। পরে সবার মৃত্যু নিশ্চিত করে নিজে ট্রলার চালিয়ে হাইমচর এলাকায় এসে অন্য ট্রলার দিয়ে পালিয়ে যান। মাস্টার গোলাম কিবরিয়াকে হ-ত্যার সময় অন্যরা দেখে ফেলায় ইরফান জাহাজের সবাইকে হ-ত্যা করে। এদিকে মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে সার বহনকারী এমভি আল বাখেরা জাহাজে সাতজন খু-নের ঘটনায় অজ্ঞাত ১০ জনকে আসামি করে হাইমচর থানায় মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চাঁদপুর নৌপুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান। লাইটার জাহাজ মালিকদের পক্ষে মোঃ মাহাবুব মোর্শেদ বাদী হয়ে ওই মামলা করেন। নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, মামলায় খুন ও ডাকাতির অভিযোগ এনে চাঁদপুর সদরের হরিণাঘাট নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই জাহাজটি থেকে একটি রক্তাক্ত চায়নিজ কুড়াল, একটি চাকু, দুটি স্মার্টফোন, দুটি বাটন ফোন, একটি মানিব্যাগ ও নগদ ৮ হাজার টাকা উদ্ধার হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গত সোমবার চাঁদপুরের মাঝেরচরে মেঘনা নদীতে সারবাহী জাহাজ থেকে পাঁচ শ্রমিকের মর-দেহ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া গুরুতর আহত তিনজনকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে দুজন মা-রা যান। একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় শিল্প মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ পৃথকভাবে ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটনে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

Back to top button