মোঃ নাজমুল হাসান নাজিরঃ
বগুড়ার সারিয়াকান্দি পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিকেল ৪টার দিকে ভাঙনের কবলে পড়ে নিমিষে শতাধিক বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ পয়েন্টে নদীর পানি রেকর্ড করা হয় ১৬ দশমিক ৩৬ মিটার (বিপৎসীমা ১৬ দশমিক ২৫ মিটার)।জানা যায়, সারিয়াকান্দির হাসনাপাড়া স্পার হুমকির মুখে পড়েছে।
সেখানে ৬৫ ফুট মাটির স্যাংক (ঢাল) দেবে গেছে। এ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ চর প্লাবিত হয়েছে। সেই সঙ্গে কামালপুর ইউনিয়নের ইছামারায় দেখা দিয়েছে। সেখানে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে এক নিমিষে শতাধিক বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপবিভাগীয়প্রকৌশলী হুমায়ন কবির জানান, যমুনার পানি বৃদ্ধির ফলে সারিয়াকান্দির হাসনাপাড়া স্পার হুমকির মুখে পড়েছে। স্পারের তলদেশ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় ৬৫ ফুট মাটির স্যাংক দেবে গেছে। স্পারের দেবে যাওয়া অংশে জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্ষার শুরু থেকে কামালপুর ইউনিয়নের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৪টি ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় ঠিকাদার কাজ করছিলেন। সম্প্রতি পাহাড়ি ঢলের বন্যায় হঠাৎ করে বেড়ে যায় ভাঙন। ভাঙন প্রতিরোধে আমরা বালুভর্তি জিও টিউব ব্যবহার করছি। আমাদের পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ মজুদ আছে। আমরা ফেলছিও। কিন্তু পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার পর হঠাৎ করে ম্যাসিভ আকার ধারণ করলো। বিগত ১০ বছরেও এরকম নদী ভাঙন এলাকাবাসী দেখেনি।
কামালপুর ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদুজ্জামান রাসেল জানান, ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। একশরও বেশি বাড়ি এক নিমিষে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এসময় কোনোমতে সেসব বাড়ির লোকজন বের হয়ে আসতে পেরেছে। কিন্তু তাদের বাড়ির কোনো জিনিসপত্রই তারা রক্ষা করতে পারেনি। একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছে ওইসব পরিবার।
সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সবুজ কুমার বসাক বলেন, আমরা সবাইকে অবহিত করেছি। ফায়ার সার্ভিসের মাধ্যমে উদ্ধার কাজ শুরু করেছি। এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
বগুড়া জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, যমুনা নদীতে বিপৎসীমা নির্ধারণ করা হয় ১৬ দশমিক ২৫ মিটার। শুক্রবার (০১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টার হিসেব অনুযায়ী নদীর পানি ১৬.৩৯ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অর্থাৎ বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে জেলার বাঙ্গালী নদীতে বিপৎসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫.৪০ মিটার। এ নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ১৪.৪৮ মিটার হলেও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম জানান, যমুনার পানি বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ১৫ হেক্টর আমন (স্থানীয় জাতের গাইঞ্জা ধান), ২ হেক্টর বীজতলা ও ১ হেক্টর সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে।