রাজশাহী প্রতিনিধিঃ
মসজিদ ও মাদ্রাসার নাম ভাঙিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে দানের নামে চাঁদা আদায় করার সময় গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছেন রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার কেশরহাটের তিন প্রতারক। ২০ আগস্ট রোববার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে দুর্গাপুর উপজেলার ১নং নওপাড়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের নান্দীগ্রামে। এঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও ভাইরাল হলে এলাকাবাসীর মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। গণধৌলাইয়ের শিকার ওই ব্যক্তিরা হলেন কেশরহাট পৌর এলাকায় বসবাসকারী আবুল হোসেন, মনির হোসেন এবং সুজিত হোসেন…
স্থানীয়রা জানায়, দীর্ঘদিন পুর্বে প্রতারণা করতেই সূদুর কুমিল্লার চাঁদপুর জেলা হতে কেশরহাটে এসেছিল মনির হোসেন ও আবুল হোসেন নামের আপন দুই ভাই। তারা এখানে ভাড়া বাড়িতে বসবাসের কিছুদিনের মধ্যে এলাকার বিভিন্ন দানশীল ও অফিস আদালতসহ বাড়ি বাড়ি গিয়ে মসজিদ-মাদ্রাসার উন্নয়ন কাজের নাম ভাঙিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আদায় করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতেন। এ টাকায় তাদের সংসার চলতো। তবে কোনো মসজিদ-মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ জানতেন না যে, তারা এভাইে প্রতারণা করে টাকা আদায় করতো।
দানশীলরা কোন মসজিদ-মাদ্রাসার জন্য এসেছেন জানতে চাইলে তারা কৌশলে বলতেন কেশবপুর মসজিদ। কোথায় সে মসজিদ। কেশরহাট পৌরসভা এলাকায় অথবা মোহনপুর উপজেলায় এ নামের কোনো মসজিদ-মাদ্রাসা এমনকি গ্রামও নেই। এরই মাঝে আবুল, মনিরের দলে যুক্ত হন স্থানীয় প্রায় অর্ধশতাধিক প্রতারক। যারা স্থানীয় ভাবে গাঁজাখোর হিসেবে পরিচিত। প্রতিদিন ভোর হলেই তারা গ্রুপে গ্রুপে ভাগাভাগি করে প্রতারণা করতে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েন। সন্ধ্যায় ফিরে এসে একত্রে করতেন ওইসব টাকার ভাগ বাটোয়ারা।
২০ আগস্ট আবুল, মনির এবং কেশরহাট পৌর এলাকার হরিদাগাছি গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের ছেলে সুজিত হোসেনের গ্রুপ পার্শবর্তী দুর্গাপুর উপজেলার ১নং নওপাড়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের নান্দীগ্রাম নামক গ্রামে গিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে নাসির উদ্দিনের ছেলে নাজিম মাস্টার (৫২), আব্দুস সালাম এর স্ত্রী রমেলা এবং মৃত আব্দুলের ছেলে বিদেশ ফেরত কাদের (৩৫) এর নিকট হতে প্রতারণা করে টাকা দান নেয়ার সময় সন্দেহ হলে স্থানীয়রা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। এসময় তারা প্রতারণার মাধ্যমে মসজিদ-মাদ্রাসার নাম ভাঙিয়ে টাকা আদায় করার কথা স্বীকার করেন। এঘটনায় উত্তেজিত জনতা তাদের তিনজনকে গণপিটুনি দিয়ে ছেড়ে দেয়। এঘটনায় ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে তারা দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণার কথা স্বীকার করেন এবং ভবিষ্যতে আর প্রতারণা না করার মুচলেকা দিয়ে রক্ষা পান।
উল্লেখ্য : চায়ের স্টলে, গ্রামের মোড়ে, বাজারের সকল পট্টিতে ভাইলার এ ভিডিও দেখে তাদের নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করছেন সর্বস্তরের লোকজনেরা। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে স্থানীয় সাংবাদিকগণ আবুল ও মনিরের বাড়িতে গেলে কেউ বাড়ির দরজা খুলেনি বা কথাও বলতে আগ্রহও প্রকাশ করেনি। স্থানীয় আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে সুজিতের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয়রা জানায় যে, সুজিত সম্প্রতি তাদের দলে যোগ দিয়েছে মোটরসাইকেল ড্রাইভার।
এবিষয়ে কেশরহাট পৌরসভার মেয়র শহিদুজ্জামান শহিদ বলেন, এরা কুমিল্লা জেলা থেকে আসা প্রতারকচক্র। এখানে থেকে পৌরসভা এলাকার নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে আল্লাহর ঘরের নাম ভাঙিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে চাঁদাবাজি করে। ইতোপুর্বেও একবার আটক হয়েছিল। সকলকে এদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে। কোথাও গিয়ে প্রতারণা করলে এদের আইন শৃ্খংলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সোপর্দ করার জন্য জনসাধারণকে পরামর্শ দেন তিন।