মোঃ আলাউদ্দীন মন্ডল রাজশাহীঃ
বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য শিক্ষা ক্যাডার সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও শিক্ষা ক্যাডারকে বিশেষায়িত পেশা হিসেবে গড়ে তোলা হয়নি। তাই বিশেষায়িত পেশার দাবি করেছে রাজশাহী অঞ্চলের সাধারণ শিক্ষা ক্যাডাররা।
মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১ টার দিকে রাজশাহী শিক্ষক মিলনায়তনে রাজশাহী অঞ্চলের বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নেতৃবৃন্দ এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এমন দাবি জানান।
এদিন ক্যাডার কম্পোজিশনের সুরক্ষা, পদোন্নতি, পদসৃজন, স্কেল আপগ্রেডেশন ও আন্ত:ক্যাডার বৈষম্য নিরসনসহ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ন্যায্য দাবিসমূহ আদায়ে সংবাদ সম্মেলন করেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নেতৃবৃন্দ।
তারা জানান, বর্তমান সময়ে শিক্ষা ক্যাডার আবারও বেশ প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে পড়েছে। সে প্রতিকূলতা দূর করার ক্ষেত্রে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি বিভিন্ন সাংগঠনিক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। শিক্ষা ক্যাডারদের বঞ্চনা আর বৈষম্যের মাধ্যমে এ পেশার কার্যক্রমকে সংকুচিত করা হয়েছে। এ পেশাকে গ্রাস করছে অদক্ষ অপেশাদাররা যা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দর্শনের পরিপন্থী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার যেসকল অভীষ্ট নির্ধারণ করেছে সেগুলো অর্জনে তিনিও শিক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে তাই তিনি স্মার্ট শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। এগুলো বাস্তবায়নে প্রয়োজন জাতির পিতার দর্শনের বাস্তবায়ন।
তারা আরও বলেন, যিনি শিক্ষা প্রশাসন পরিচালনায় শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব প্রদানের মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন, একই ব্যবস্থা গ্রহণ বর্তমান বাস্তবতায় সবচাইতে প্রাসঙ্গিক। তাই জরুরিভাবে প্রয়োজন একটি দক্ষ, যুগোপযোগী ও স্বয়ংসম্পূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থাপনা। শিক্ষায় জাতীয় লক্ষ্য অর্জনে উপজেলা, জেলা, অঞ্চলেশিক্ষা সংশ্লিষ্ট দপ্তর, অধিদপ্তর ও প্রকল্পসমূহ পরিচালনায় শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের নিয়োগ সময়ের দাবি। বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) Composition and Cadre rules-১৯৮০ মোতাবেক দেশের প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা স্তরের শিক্ষা প্রদান, পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা, পরিকল্পনা, গবেষণা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পর্যন্ত শিক্ষা ক্যাডারের কার্য পরিধি ব্যাপৃত।
বক্তারা বলেন, প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষাস্তর সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের নবম গ্রেডের উপরে সকল পদ শিক্ষা ক্যাডারের তফসিলভুক্ত। এসব পদে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা বাদে অন্য কারও পদায়নের সুযোগ নেই। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা ক্যাডারের তফসিলভুক্ত পদ থেকে শিক্ষা ক্যাডার বহির্ভুতদের অপসারণের দাবী জানিয়েছি কিন্তু সেটি করা হয়নি। উপরন্তু আমরা লিখিতভাবে আপত্তি জানাবার পরেও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের তফসিলভুক্ত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ৫১২ টি পদ শিক্ষা ক্যাডারের তফসিল বহির্ভূত করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়োগবিধি চূড়ান্ত করা হয়েছে। এটি সুস্পষ্টতই শিক্ষা ক্যাডারের অস্তিত্বের উপর আঘাত। আমরা এসকল কর্মকান্ডকে সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার শামীল মনে করি। শিক্ষা ক্যাডারকে অন্ধকারে রেখে এই বিধি করার এখতিয়ার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেই। আমরা শিক্ষা ক্যাডার বিরোধী এসকল কর্মকান্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে এবিধি বাতিলের দাবী করেন।
এসময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির যুগ্ম মহাসচিব প্রফেসর ড. ইলিয়াছ উদ্দিন।
তিনি বলেন, শিক্ষার রূপান্তরের অন্যতম কারিগর বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাগণ। তাঁরাই প্রণয়ন করেছেন নতুন শিক্ষাক্রম, এর বাস্তবায়নেও তাঁরাই অন্যতম শক্তি। শিক্ষা ক্যাডারের ১৬ হাজার কর্মকর্তা বর্তমান সরকারের ভিশন-২০৪১ তথা স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে কিন্তু প্রাপ্য অধিকার ও সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কোন কারণ ছাড়াই পদোন্নতি বন্ধ আছে দুই বছর।
এই মূহুর্তে শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তার সংখ্যা ৭ হাজারের বেশি। এর মধ্যে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি যোগ্য ১ হাজার ২০০ জন। সহযোগী অধ্যাপক পদোন্নতি যোগ্য ৩০০০ জন, সহকারি অধ্যাপক পদে পদোন্নতি যোগ্য কর্মকর্তা আছেন প্রায় ৩০০০ জন। এই কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্য সরকারের কোন অতিরিক্ত অর্থ প্রয়োজন নেই।
সবাই পদোন্নতিযোগ্য পদের বেতন স্কেলের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে গেছেন। ক্যডার সার্ভিসে শূন্য পদ না থাকলে পদোন্নতি দেয়া যাবে না এমন কোন বিধান নেই। অথচ, শিক্ষা ক্যাডারকে শূন্য পদের অজুহাতে পদোন্নতি বঞ্চিত রাখা হয়। প্রধানমন্ত্রী সকল ক্যাডারের জন্য সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিয়ে ক্যাডার বৈষম্য নিরসনের নির্দেশনা দিলেও তা পালিত হয়নি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আন্তঃ ক্যাডার বৈষম্য নিরসনের নির্দেশ দিয়েছেন বারবার। কিন্তু সে নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। অন্য ক্যাডারের মত শিক্ষা ক্যাডারে ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি অনুসৃত না হওয়ায় অন্যান্য ক্যাডারের তুলনায় শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাগণ পিছিয়ে আছেন। বেতন স্কেল অনুযায়ী ৪র্থ ও ৬ষ্ঠ গ্রেড প্রাপ্য কর্মকর্তাগণের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে ১ বছরপূর্বে। কিন্তু এ বিষয়েও কোনো অগ্রগতি নেই।
সমিতির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষকও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহে জনবলের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। পূর্বের তুলনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেড়েছে, শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেড়েছে, সিলেবাস। কোর্স বেড়েছে কয়েকগুন। কিন্তু সে তুলনায়পদ সৃজন হয়নি।
বর্তমান শিক্ষা ক্যাডার নিয়ন্ত্রিত সরকারি কলেজসমূহে উচ্চ মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা স্তরে প্রায় ৫০ লক্ষ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষকেরপদ সৃজন অপরিহার্য। অথচ বর্তমানে সরকারি কলেজসহ শিক্ষা প্রশাসনে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তার সংখ্যা মাত্র ১৬ হাজার। শিক্ষার মতো এত গুরুত্বপূর্ণ একটি খাতে ১২ হাজার ৪৪৪ টি পদ সৃজনের প্রস্তাব আটকে আছে দীর্