গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায় নদীথেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মামলায় কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদককে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) গাজীপুরের অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে বিচারক ফারাহ্ মামুন তা নামঞ্জুর করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।আসামি মাহবুবুল আলম বাবলু (৫৫) উপজেলার রাউৎকোনা এলাকার মৃত মমতাজ উদ্দিন প্রধানের ছেলে। তিনি কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি এবং বর্তমানে উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক।
মামলার অপর আসামিরা হলেন কাপাসিয়া মধ্যপাড়া এলাকার সমির সরকারের ছেলে সাইফুল সরকার (৫০), আলাউদ্দিনের ছেলে নুরুজ্জামান ওরফে জামান (৪০) দস্যু নারায়নপুর গ্রামের ফাইজ উদ্দীনের ছেলে মতিউর রহমান (৬৫), একই এলাকার সিরাজুল হকের ছেলে ইলিয়াস (৩৫), কালীগঞ্জের গুনুপাড়া গ্রামের ফাইজ উদ্দিনের ছেলে আনিছুর রহমান (৪৫)।
মামলার অভিযোগ পত্র থেকে জানা যায়, আসামিরা তরগাঁও ইউনিয়নের বাঘিয়া মৌজার বানার নদী তথা শীতলক্ষা নদী থেকে প্রতিদিন গড়ে ২৪ হাজার বর্গফুট করে ১২ লাখ বর্গফুট বালু অবৈধভাবে উত্তোলন ও চুরি করে স্তুপ আকারে সাইফুল ও জামানের বালুর গদিতে জমা করে পর্যায়ক্রমে বিক্রয় করতে থাকে। অবৈধ ভাবে উত্তোলন বালুর আনুমানিক মূল্য ৩০ লাখ টাকা। পরে খবর পেয়ে কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়। এ সময় বালু উত্তোলনের ড্রেজার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি জব্দ করে স্থানীয় প্রশাসন। পরে জব্দকৃত মা-বাবার দোয়া ড্রেজার মো. আলমগীর হোসেনের জিম্মায় এবং আল্লাহ্ ভরসা ও এমবি হযরত শাহ্জালাল (রঃ) শাহপরান ড্রেজার দুইটি তরগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান শিকদারের কাছে জিম্মায় রাখে উপজেলা প্রশাসন।উদ্ধারকৃত ৪১ হাজার ঘনফুট চোরাই বালু নিলামের মাধ্যমে বিক্রয় করে অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়েছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ রয়েছে।
মামলার নথিতে আরও উল্লেখ রয়েছে, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর ক্ষতিসহ ফকির মজনুশাহ সেতু ও বাঘিয়া মৌজায় জনসাধারণের ঘর-বাড়ি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। এ ছাড়া ওই মৌজায় বসবাসকারী অধিবাসীদের কবরস্থান, শ্মশান, ধর্মীয় ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে ইতোপূর্বে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।
মামলার এজাহারে আসামি হিসেবে সাইফুল ইসলাম ও জামানের নাম সরাসরি উল্লেখ ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার কারাগারে প্রেরিত আসামি বাবলু প্রধানের নাম এজাহারে উল্লেখ না থাকলেও তিনি আল্লাহ ভরসা ড্রেজারের মালিক বলে এজাহারে উল্লেখ রয়েছে। পরবর্তীতে অভিযোগপত্রে তার বিস্তারিত পরিচয় নিশ্চিত করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এ মামলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাকসুদুল ইসলাম, ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আনিসুল ইসলাম, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক এবং তরগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান শিকদারসহ মোট ২২জন সাক্ষী রয়েছে। আরেক সাক্ষী এম এইচ নোমান জেলা শ্রমিক লীগ নেতা।
বাবলু ঘটনার সময় বিদেশে ছিলেন বলে আদালতে জামিন শুনানিতে জানান আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। কাপাসিয়া থানায় এমন আরও একটি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বালু চুরির মামলা তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, এ ঘটনায় তরগাঁও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা ২০১৭ সালের ৫ জুন কাপাসিয়া থানায় তাদের অভিযুক্ত করে মামলা [নম্বর ১০(৬)১৭] করেন। মামলায় দণ্ডবিধির ৪৩১ ও ৩৭৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। পরে চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি তদন্তকারী কর্মকর্তা কাপাসিয়া থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মনিরুজ্জামান খান তদন্ত শেষে দণ্ডবিধির ১৪৩, ৪৪৭, ৪৩১, ৩৭৯ ও ৪১১ ধারায় অভিযোগ এনে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশীট) দাখিল করেন।