বিশেষ প্রতিনিধিঃ
গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের গণ পিটুনিতে নিহত তোফাজ্জলের মামাতো বোন আসমা আক্তার তানিয়া দাবি করেছেন, তোফাজ্জলের পরিবারের মধ্যে একজন খুনি রয়েছে, তাকেও বিচারের আওতায় আনা উচিত। (২২ সেপ্টেম্বর)রবিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে নিজ আইডিতে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এই দাবি করেন। সেখানে তোফাজ্জলের ভাবি ও ভাইয়ের শাশুড়িকে দোষারোপ করা হয়েছে। তোফাজ্জলের পরিবারের মধ্যে একজন খুনি রয়েছে, তাকেও বিচারের আওতায় আনা উচিত। তোফাজ্জল আমার ফুফাতো ভাই + দুধ ভাই (আমরা একই মায়ের দুধ পান করে বড় হয়েছি)। তোফাজ্জলকে যারা মেরে ফেলেছে, তারা তো অবশ্যই খুনি। কিন্তু আমার মতে তার আরও দুই জন খুনি অপরাধীর নামের খাতা থেকে বাদ পড়েছে, সেই দুইজন হলো ওর একমাত্র ভাবি ও ভাইয়ের শাশুড়ি। ভাবিরা মায়ের মতো আদর, স্নেহ দিয়ে আগলে রাখেন- কিন্তু তোফাজ্জল এতটাই হতভাগা ছিল কোনোদিন ভাবির হাতে এক প্লেট ভাত খেতে পারেনি। আজ সেই পাগলাটা ভাতের খোঁজেই মারা গেলো। তোফাজ্জলের পরিবারে শেষ আশ্রয়স্থল ছিল, ওর একমাত্র ভাবি- যে কিনা ওর সঙ্গে কুকুর বিড়ালের মতো আচরণ করতো। তোফাজ্জেল সুস্থ হোক সে এটা কখনও চায়নি, কেন চায়নি জানেন? কারণ সে সুস্থ হলে সমস্ত সম্পত্তিতে ভাগ বসাবে। তোফাজ্জলকে যখন ফজলুল হক হলের ছাত্ররা অত্যাচার করছিল, তখন অভাগাটা নিরুপায় হয়ে ভাবিকেই কল দিতে বলেছিল, হয়তো ভেবেছিল, ভাবির মনটা আমার জন্য একটু হলেও কাঁদবে। ওর ভাবি ফোন পেয়ে কী করেছিল জানেন? সে মোবাইল চোরের বিচার ছাত্রদেরকেই করতে বলেছিল এবং এটাও বলেছিল যে, তাকে যেন এ বিষয়ে আর ফোন দেওয়া না হয়। এই বলে রাতে ফোনটা বন্ধ করে ঘুমিয়ে যায়। তোফাজ্জেলের বড় ভাই যখন রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে মৃত্যুশয্যায় তখন ভাইয়ের সেবা যত্ন তোফাজ্জল করতো। ওই সময় ওর ভাবি এবং তার মা কতটা মানসিক নির্যাতন করতো আমি তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। কখনও যদি ভাবির কাছে একপ্লেট ভাতের আশায় যেত, গ্রামের বাড়িগুলোতে যখন পাগলা কুকুর বাড়িতে ঢুকলে লাঠি দিয়ে তাড়া করতো, ঠিক ওর ভাবিও একই কাজটা করতো।
তোফাজ্জেলের ভাই পুলিশের এসআই ছিল। তিনি জীবিত অবস্থা মোটামুটি ভালো একটা সম্পত্তির রেখে গেছেন, যেটার পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা যেমন (পেনশন, তিনটা জীবনবীমা, এফডিআর, চরদুয়ানী ব্রিজের পাশে দুই তিনটা দোকান, কিছু পারসোনাল জমি রাখা ও তার বাবার সম্পত্তি)। বলা ভালো, তোফাজ্জেলের ভাবি তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। এই কারণে তোফাজ্জেল সুস্থ থাকুক সে সেটা কখনোই চায় নাই। আসল কথায় আসি, তোফাজ্জেলের মৃত্যু পর একমাত্র গার্ডিয়ান হিসেবে দাঁড়িয়েছে ওর একমাত্র ভাবি। সে মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দিচ্ছে, কান্নার অভিনয় করছে, সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতা সে নিচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও নেবে। আমার একটাই প্রশ্ন, সে কোন অধিকারে নিচ্ছে? যে তোফাজ্জল জীবিত অবস্থা তার থেকে একটু ভালোবাসা পায় নাই, এখন আসছে গার্ডিয়ান হিসেবে। কেন একমাত্র গার্ডিয়ান হিসেবে দাঁড়িয়েছে জানেন? সে এখন তোফাজ্জেল মৃত্যুর বড় একটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ পেতে পারে, ভাবি এইটুকু মাথায় রাখেন- আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না, তোফাজ্জেলের এই অবস্থার পেছনে আপনিও দায়ী। দয়া করে কোন মিডিয়া পারসন বা সংস্থা ওর ভাবিকে তোফাজ্জলের মৃত্যু বিষয়ে কোন কাজে লাগাবেন না। তোফাজ্জেল আর ফিরে আসবে না, ওর মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ, কোনও সাহায্য সহোযোগিতা, ওর ভাবি বা আমরা আত্মীয় স্বজন যারা আছি, কারোর দরকার নাই। কেউ যদি কিছু করতে চান তাহলে, ওর উদ্দেশ্য করে মসজিদে মিলাদ পরিয়ে দিয়েন- যার জন্য তোফাজ্জেলের আত্মা শান্তি পাবে। বা হাজারো অসহায় তোফাজ্জল রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়- একপ্লেট ভাতের জন্য, এটা তাদের পেছনে ব্যয় করবেন। এর আগে বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে আটকে রেখে শারীরিকভাবে নির্যাতন করায় তোফাজ্জল মারা যান। নিহত এই যুবক বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠালতলী ইউনিয়নের তালুকের চরদুয়ানী গ্রামের মৃত আবদুর রহমান হাওলাদারের ছেলে। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা হয়েছে। কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন আসামিরা।