কামরুল ইসলাম চট্টগ্রামঃ
চট্টগ্রামে কয়েকদিনের কনকনে শীতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। শীতের প্রকোপ বাড়ার সাথে সাথে নিচের দিকে নামছে তাপমাত্রার পারদ। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে চারদিক। এই সময়ে দরিদ্র শীতার্ত মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে চট্টগ্রামের কিছু উপজেলায়। শীতজনিত রোগে এক সপ্তাহে চট্টগ্রামের পল্লী গ্রামের হাসপাতাল গুলোতে ভর্তি হয়েছেন ১২২৯ রোগী।চট্টগ্রাম জেলায় এখন পর্যন্ত পাবলিক ভাবে অথবা সরকারিভাবে পৌছায়নি গরম কাপড় কনকনে ঠান্ডায় গরীব অসহায় মানুষরা চেয়ে আছে কবে পাবলিক অথবা সরকারি ভাবে শীত বস্ত্র তাদের কাছে পৌঁছে যাবে। শীতের আদ্রতা রেকর্ড করা হয়েছিল ৯৭ বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সকাল ৬ টা এবং সকাল ৯ টার সময় চট্টগ্রাম আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিস চট্টগ্রাম অঞ্চলের তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ। যা চলতি বছরে জেলার সর্বনিন্ম তাপমাত্রা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়া পর্যবেক্ষক বলেন, ‘বৃহস্পতিবার আকাশে কুয়াশা রয়েছে ও নিম্নচাপের কারণে আকাশ মেঘলা। আগামীকালও একই আবহাওয়া থাকতে পারে। কয়েকদিনের মধ্যে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হবার সম্ভাবনা আছে। তখন তাপমাত্রা আরও কমবে।’ এদিকে হিমেল হাওয়া ও কনকনে ঠান্ডায় জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। সকাল থেকে সূর্যের দেখা মিলছেনা। দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টির মত পড়ছে কুয়াশা। দিনের বেলাতেও যানবাহনগুলো গতি কমিয়ে এবং হেডলাইট জালিয়ে চলতে দেখা গেছে। প্রচন্ড শীতে মানুষের পাশাপাশি প্রাণীকুলও জবুথবু হয়ে পড়েছে। তীব্র শীতের হাত থেকে বাঁচতে ধনী ব্যক্তীরা যাচ্ছে মার্কেটে গরীব অসহায় মানুষ গরম কাপড়ের জন্য ভীড় করছে ফুটপাতে কিন্তু মধ্যবিত্তরা টাকার অভাবে যেতে পারছেন না মার্কেটে লজ্জায় যেতে পারছেন না ফুটপাতে এতে করে বিপাকে পড়ছে মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ অথবা নয় উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতে বেড়েছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। শীতজনিত কারণে শিশু ও বয়স্কদের ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগের প্রকোপ বেড়েছে। চট্টগ্রাম জেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে (৫ ডিসেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) শীতজনিত কারনে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতে ও ২০০/ ৩০০ রোগী ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে ১০০ জন শিশু, ১৫০ নারী ও ৫০ জন পুরুষ। ৫০০/১০০০শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল গেলো এক সপ্তাহে ২৫৪ জন শিশু, ৩৬৩ জন নারী ও ২৯৩ জন পুরুষ রোগী শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্স গুলোতে গত এক সপ্তাহে শীতজনিত কারনে ৯৪ রোগী ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে ১৮ জন শিশু, ৪৮ নারী ও ১৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গত এক সপ্তাহে শীতজনিত কারনে ২২৫ জন রোগী শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে ৭৮ জন শিশু, ৯৮ জন নারী ও ৪৯ জন পুরুষ। চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলায় তিন লাখেরও অধিক মানুষ গরম কাপড়ের অভাবে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। শীতার্থদের জন্য এখন পর্যন্ত সরকারীভাবে অথবা পাবলিক ভাবে কম্বল বা গরম কাপড় ভাগ্যে জোটেনি। তবে, কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে বেশ কয়েক জায়গায় সামান্য শীতবস্ত্র বিতরণ করার খবর পাওয়া গেছে।লোহাগাড়া উপজেলায় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলেন, গত কয়েকদিন ধরে অধিকাংশ রোগীই শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। শীতজনিত রোগ যেমন- সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। যার অধিকাংশই শিশু ও বয়স্ক। শিশুদের উষ্ণ স্থানে রাখা ও বয়স্কদের শীতজনিত রোগ থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এসময়টায় যতটা সম্ভব ঘরের ভেতর থাকা এবং শরীরকে সবসময় গরম রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকরা জানান, শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাবও বেড়েছে। সে কারনে স্বাস্থ্য কর্মীদের ঘরে ঘরে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের জন্য জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে এবং প্রতিটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে।সাংবাদিক কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন, শীতার্থদের জন্য এখন পর্যন্ত কম্বল, গরম কাপড় বা নগদ টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়নি চট্টগ্রাম জেলার নয় উপজেলায়। চট্টগ্রাম জেলার আলোচিত ব্যক্তিত্ব বিশিষ্ট সমাজ সেবক তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রিয় নেতা বিশিষ্ট শিল্পপতি আমিরাবাদ ইউনিয়নের কৃর্তী সন্তান চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার লোহাগাড়া উপজেলার দক্ষিণ সাতকানিয়া গোলামবারী সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা আশরাফ আলী চৌধুরীর সুযোগ্য দৌহিত্র অত্র বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য অলি উল্লাহ চৌধুরীর সুযোগ্য পুত্র ইউনিটি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান, দক্ষিণ সাতকানিয়া গোলামবারী সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি ও বশরত আলী মুন্সি জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি জনাব ফোরকান উল্লাহ চৌধুরী প্রতিবারের মতো এইবার ও লোহাগাড়া উপজেলা এবং পার্শ্ববর্তী উপজেলা গুলোর শীতার্থদের জন্য ২৫ লক্ষ টাকার কম্বল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। লোহাগাড়া সাতকানিয়া উপজেলার বিভিন্ন মানুষ বলেন ফোরকান উল্লাহ চৌধুরী প্রতি বছর শীতার্থদের জন্য শীতবস্ত্র নিয়ে সবার আগেই অসহায় মানুষের পাশে এসে মানবতার হাতে এগিয়ে দেন এই মানুষটির মতো প্রতিটি উপজেলার ধর্ণাঢ্য ব্যাক্তীদের এগিয়ে আসা দরকার। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে ৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা চট্টগ্রাম জেলার রেকর্ড করা হয়, যা গত ৩৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। আর গত শীতে তাপমাত্রা ৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। যেটা ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে রেকর্ড করে আবহাওয়া অফিস।