কামরুল ইসলাম চট্টগ্রামঃ
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির তিন নেতার বিরুদ্ধে রাতের আঁধারে এস আলম গ্রুপের গাড়ি সরিয়ে নেয়ার অভিযোগ ওঠার পর বিলুপ্ত করা হয়েছে চার বছর ১০ মাস আগে গঠিত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। একই সঙ্গে অভিযুক্ত তিন নেতার প্রাথমিক সদস্যসহ সকল পর্যায়ের পদ স্থগিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে গত রাতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী পৃথক দুটি পত্র ইস্যু করেন। পদ স্থগিত করা তিন নেতা হচ্ছেন– দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম ও সদস্য এস এম মামুন মিয়া। এর আগে গত শনিবার রাতে এই তিনজকে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। গতকাল তারা রাজধানীর নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে নোটিশের জবাব দেন। কমিটি বিলুপ্তি ও পদ স্থগিতের বিষয়টি আজাদীকে নিশ্চিত করেন বিএনপি’র চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম ও সহ–সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২ অক্টোবর মহানগর বিএনপির সিনিয়র তৎকালীন সিনিয়র সহ–সভাপতি আবু আবু সুফিয়ান আহ্বায়ক এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির তৎকালীন সভাপতি মোস্তাক আহমেদ খানকে সদস্য সচিব করে দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ২০২৩ সালের ৭ মে কমিটির ৪ নং সদস্য এনামুল হক এনামকে কমিটির ১ম যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। আহ্বায়ক কমিটি গঠনের সময় বলা হয়, গঠিত কমিটির মেয়াদ হবে তিন মাস। তারা এই তিন মাসের মধ্যে দক্ষিণ জেলার আওতাভুক্ত প্রতিটি উপজেলা, থানা ও পৌরসভার কমিটি গঠন শেষে দক্ষিণ জেলার কাউন্সিল আয়োজন করবেন। কিন্তু চার বছর ১০ মাস দায়িত্ব পালন করেও কাউন্সিল করতে পারেনি। অভিযোগ আছে, এনামুল হক এনামকে যুগ্ম আহ্বায়ক করার পর সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ খানকে দলের কর্মকাণ্ডে ডাকা হত না। সুফিয়ান ও এনাম দুজন মিলেই যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতেন। বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ আছে তৃণমূলের। এর মধ্যেই একটি কারখানার ভেতর থেকে বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল দামি গাড়ি সরিয়ে নেয়ার একটি ভিডিও গত শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। গুঞ্জন রয়েছে সরিয়ে নেয়া গাড়িগুলো এস আলম গ্রুপের। আবু সুফিয়ান ও এনামুল হক এনাম উপস্থিত থেকে গাড়ি সরিয়ে দেয়ার বিষয়টি তদারকি করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি। যদিও তারা দাবি করেন, এস আলম গ্রুপের সঙ্গে নিজেদের ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতা নেই। কমিটি বিলুপ্তের বিষয়ে আবু সুফিয়ান গণমাধ্যম কে বলেন, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নিয়েছি। দায়িত্ব পালনকালে দলের জন্য সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করেছি। এই সময়ে দক্ষিণ জেলা ১৪টি সাংগঠনিক ইউনিটের মধ্যে ১৩টিতে আহ্বায়ক কমিটি দিয়েছি। আওয়ামী লীগ ও প্রশাসনের বাধার কারণে সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। বিলুপ্ত কমিটির সদস্য সচিব মোস্তাক আহমদ খান গণমাধ্যম কে বলেন, এই কমিটি আরো বহু আগে বাদ করা উচিত ছিল। এনামুল হক এনামকে কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক করার পর থেকে এখানে কোনো সাংগঠনিক কমকাণ্ড পরিচালিত হয়নি। আমি দায়িত্বে থাকার পরও কোনো কর্মকাণ্ডে আমাকে সম্পৃক্ত হতে দেয়নি। তার ইচ্ছেমত সংগঠন চালিয়েছে।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দীন গণমাধ্যম কে বলেন, দেশে একটা পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তনের পর প্রত্যেক নেতাকর্মীর উচিত নিজের এবং দলের অবস্থান বুঝে কাজ করা। নিজেকে ওভার স্মার্ট মনে করে কোনো কাজ করলে দলের বদনাম হবে এবং দলের নেতাকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই নেতাকর্মীদের উচিত দলের প্রতি আনুগত্য রেখে কাজ করা। অন্যথায় তাদেরও একই পরিণতি হবে। আমি মনে করি, এই ঘটনা দলের সারা দেশের নেতাকর্মীদের একটা বার্তা দেয়া হয়েছে। বার্তা হল বিগত সরকারের সাথে সম্পৃক্ত ছিল এমন কাউকে যেন কেউ সহযোগিতা না করে।