দেশজুড়ে

পুলিশের গাড়িতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত সিটি ইউনিভার্সিটির ছাত্র স্বজলের পরিবারের খোজঁ নেয়নি কেউ

নাজমুল হাসান নজির নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
আন্দোলন চলাকালীন সময়ে সজলের মা ফোন কলে বারবার তার ছেলে সজলকে বাসায় ফিরে আসতে বললেও মায়ের কথায় কখনোই কর্ণপাত করেননি সজল। যতবার ফোন দিয়ে বাসায় ডেকেছে ততোবারই একই কথা বলেছে। মা আমাকে ঘরে ডেকো না,আমার ভাইয়েরা যুদ্ধের ময়দানে গুলি খেয়ে মারা যাচ্ছে তাদেরকে রেখে আমি কি করে ঘরে ফিরবো মা। দেশ স্বাধীন করে বিজয়ের পতাকা হাতে নিয়েই ঘরে ফিরব মা। আর যদি না ফিরতে পারি তাহলে জানবে তোমার ছেলে শহীদ হয়েছে মা।গত ৫ আগস্ট সারাদেশে ছাত্র জনতা বিজয় পতাকা হাতে নিয়ে রাজপথে আনন্দে উল্লাসে মেতে উঠেলও কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে সজলের পরিবারে।৪ আগষ্ট রাত থেকে সজলকে আর ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরদিন খুঁজতে বের হয়ে জানতে পারা যায় সাভারের আশুলিয়া এলাকায় পুলিশের গাড়িতে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কয়েক জনের লাশসহ আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে গিয়ে কয়েকটি পোড়া লাশের ভিতর থেকে শরীরের গঠন ও আইডি কার্ড দেখে ছেলেকে সনাক্ত করেন তার বাবা-মা।
পরবর্তীতে সেখান থেকে সেনাবাহিনীদের সহযোগিতায় সজলের লাশ নিয়ে আসা হয় তার গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার শ্যামপুরে। সেখানেই তাদের বাড়ির উঠানে দাফন সম্পন্ন করা হয়। জানা যায়,বাবা খলিলুর রহমান ও মা শাহিনা বেগম ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার বানানোর জন্য গ্রাম ছেড়ে পারি জমান সাভারের আশুলিয়ায়। সেখানে প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকুরী করতেন সজলের বাবা ও মা। সজল ঢাকা সিটি ইউনিভার্সিটি তে অধ্যায়নরত ছিলেন। পড়ালেখা শেষ করে ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হয়ে সংসারের হাল ধরবেন এমনটাই স্বপ্ন ছিল তাদের। কিন্তু সন্তানের মৃত্যুতে সেই স্বপ্ন আর বাস্তবায়ন হলো না। এদিকে ভাইয়ের মৃত্যুতে ছোট বোন খাদিজা ফেরদৌসী, ভেঙে পড়েছেন। বলছে ভাইকে খুব মনে পড়ছে ,এখন কে আমাকে সাপোর্ট দেবে।অপরদিকে এক বছর এক মাসের ছোট্ট সোনামণি ছবি দেখলেই বাববা বাববা বলে ডাকছে আর চুমু খেয়ে সময় পার করছে শিশু কন্যা সাবা। সে আর কখনো তার বাবার আদর, সোহাগ,স্নেহ আর ভালোবাসা পাবেনা। এসব ভেবে নির্বাক হয়ে গেছে সজলের স্ত্রী আফরিন মৌ। তার স্বামী বেঁচে নেই এটি সে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না।এতসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কেউ কোন খোঁজ খবর না নেওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেন সজলের বাবা-মা। এমতাবস্থায় তারা দাবি করেন তাদের ছেলেকে যেন রাষ্ট্রীয় ভাবে শহীদের মর্যাদাসহ পরিবারের সকলকে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিজয়ের পতাকা নিয়ে ঘরে ফিরতে না পারলেও সজলের সমাধিতে উড়ছে এখন লাল সবুজের পতাকা।

এই বিভাগের আরও খবর

Back to top button