কামরুল ইসলাম চট্টগ্রামঃ
বিএনপির রোডমার্চ কর্মসূচির পর এবার সক্রিয়ভাবে মাঠে নামছে নগর আওয়ামী লীগ। প্রথম ধাপে আট দিনের টানা কর্মসূচি নিয়ে রবিবার থেকে মাঠ দখলে নামছে দলটি। গণসমাবেশ, শোভাযাত্রা ও আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতাদের স্মরণসভাসহ নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত এ ধরনের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে শক্তি দেখাতে সরব থাকবে দলটি। এসব কর্মসূচিতে যোগ দিবেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড জনগণের সামনে তুলে ধরা, নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করা, বিএনপির রোডমার্চের বিপরীতে মাঠে শক্তি দেখানো ও আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে সক্রিয়ভাবে মাঠে নামছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। দলটির নেতাদের ভাষ্য, নির্বাচনের প্রস্তুতি ও বিএনপির আন্দোলন প্রতিরোধ-মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ।
নগর পিতা মেয়র রেজাউল করিম গণমাধ্যম কে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার দেশের জনগণের জন্য ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড করেছে। সরকারের উন্নয়ন, অর্জন, অগ্রগতি ও সাফল্য জনগণ এবং ভোটারদের কাছে পৌঁছে দিতে টানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বানচাল করার মানসে বিএনপি-জামায়াত যাতে কোনো ধরনের সহিংসতা করতে না পারে তৃণমূল নেতাকর্মীদের উদ্বুদ্ধ, অনুপ্রাণিত ও উজ্জীবিত করাই আমাদের লক্ষ্য।’
গত ৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে রোডমার্চ করেছে বিএনপি। কুমিল্লা থেকে শুরু করে রোডমার্চ চট্টগ্রাম মহানগরীর স্টেডিয়াম সংলগ্ন নেভি মিউজিয়াম চত্বরে শেষ করে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় এ কর্মসূচিতে বড় ধরনের শোডাউন করেছে বিএনপি। হাজার হাজার নেতাকর্মীর সমাগম করে মাঠে শক্তি দেখিয়েছে দেশের অন্যতম বড় দলটি।
বিএনপির রোডমার্চের পর মাঠে এবার শক্তি প্রদর্শনে ৮ অক্টোবর রবিবার থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত আট দিনের টানা কর্মসূচি নিয়ে নামছে আওয়ামী লীগ। পর্যায়ক্রমে ৪৪ সাংগঠনিক ওয়ার্ডে এ কর্মসূচি পালন করা হবে।
নগর আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে জনগণকে সজাগ এবং সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ও অরাজকতা প্রতিরোধে নির্বাচন পর্যন্ত টানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ।’
চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ লক্ষ্যে আগামী মাসে (নভেম্বর মাস) জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ইঙ্গিত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
এদিকে, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে পরস্পরবিরোধ অবস্থানে রয়েছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও দেশের অন্যতম বড় দল বিএনপি। আওয়ামী লীগ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে অনড় রয়েছে। একই সঙ্গে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছে। অপরদিকে, বিএনপি নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। একই সঙ্গে এ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
আগামী নির্বাচন নিয়ে কর্মসূচি-পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে সরব রয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। চট্টগ্রামের রোডমার্চ থেকে সরকার পতনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ বলেন, ‘তৃণমূল নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে নগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এখন সার্বক্ষণিক অবস্থানে থাকবেন নগর আওয়ামী লীগের নেতারা। নগরের নেতাদের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পৃক্ততা বাড়াতে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সভা ও বৈঠক করা হবে।’
নগর আওয়ামী লীগ দৃশ্যত দুই ধারায় বিভক্ত। একই সঙ্গে ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলোও দুই বলয়ে আবদ্ধ। ছাত্রলীগের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অস্থিরতা চলে আসছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, ‘দলীয় পদ-পদবিধারী নেতা-কর্মীদের সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় করতে টানা কর্মসূচি ঘোষণা করা হচ্ছে। এসব কর্মসূচিতে আমরা প্রয়োজনে ভ্রাতৃপ্রতীম দলগুলোকে ডাকবো। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ও মাঠে সতর্ক পাহারার দায়িত্ব দেওয়া হবে।’
কর্মসূচি : আজ (৮ অক্টোবর) থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত নগরীর ৬টি স্থানে গণসমাবেশ ও শোভাযাত্রা করবে নগর আওয়ামী লীগ।রবিবার নগরের অক্সিজেন মোড়ে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তীতে ইপিজেড, আগ্রাবাদ বাদামতলী, বহদ্দারহাট মোড়, অলংকার মোড় হতে সিটি গেট এবং শেষে দারুল ফজল মার্কেট চত্বরে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। কাল (৯ অক্টোবর) আওয়ামী লীগের প্রয়াত কেন্দ্রীয় নেতা আতাউর রহমান খাঁন কায়সারের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভার আয়োজন করেছে। সকাল ১১টায় কাজীর দেউড়ি ইন্টারন্যাশনাল কনভেশন হলে অনুষ্ঠিতব্য সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী।