চট্টগ্রাম

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের যোগাযোগের নতুন মাইলপলক স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

কামরুল ইসলাম চট্টগ্রামঃ
এসে গেল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বুকে নির্মাণ করা প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে- মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী সিডিএ এক্সপ্রেসওয়ে’র উদ্বোধন হচ্ছে আজই। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ জয় করে টানেল চালুর ১৬ দিনের মাথায় নগর যোগাযোগের নতুন মাইলফলক- এ এক্সপ্রেসওয়ে আজ (মঙ্গলবার) ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন সিডিএ’র আরও দুই প্রকল্প- বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সড়ক এবং জানে আলম দোভাষ সড়কেরও উদ্বোধন করবেন তিনি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন- চার হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সিডিএ’র এ তিন প্রকল্প চট্টগ্রাম নগর যোগাযোগে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। চিরচেনা যানজট কমার পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সঙ্গে নগরের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ করবে। যা মানুষের কর্মঘণ্টা বাঁচাবে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করবে। দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী সিডিএ এক্সপ্রেসওয়ে:

নগরীর লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ’ প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন পায় ২০১৭ এর ১১ জুলাই। সেময় এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। ২০২০ এর জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়।

তবে নির্ধারতি সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় এ প্রকল্পের ব্যয় না বাড়িয়ে মেয়াদ ২০২২ এর জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এতেও কাজ শেষ না হওয়ায় মেয়াদ আরেক দফা বাড়িয়ে ২০২৪ এর জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। এ সময় ব্যয়ও ১ হাজার ৪৮ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়।

প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান জানান, সাড়ে ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য, ৫৪ ফুট প্রস্তের এক্সপ্রেসওয়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতে ১৪টি র‍্যাম্প রাখা হয়েছে। জিইসিতে একটি, টাইগারপাসে দুটি, আগ্রাবাদে চারটি, ফকিরহাটে একটি, নিমতলায় দুটি, সিইপিজেডে দুটি এবং কেইপিজেড এলাকায় দুটি র‍্যাম্প রয়েছে।
তিনি বলেন, মূল এক্সপ্রেসওয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করার পর সড়ক বাতি এবং সিসি ক্যামেরা স্থাপন সম্পন্ন হলেই এক্সপ্রেসওয়েটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে। মূল এক্সপ্রেসওয়ে চালু হওয়ার পর র‌্যাম্পের নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সড়ক:
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে নগরীতে প্রবেশের বিকল্প পথ তৈরি করতে বায়জিদ বোস্তামী থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত লুপ রোড নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে সিডিএ। ২০১৩ এর ৫ নভেম্বর ১৭২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এ চার লেন সড়ক নির্মাণ প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন পায়। শুরুতে এ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০১৫ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত।
তবে দফায় দফায় মেয়াদ বাড়িয়েও প্রকল্পটির কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন করতে পারেনি সিডিএ। সর্বশেষ গত আগস্ট মাসে এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ এর জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। প্রকল্পটির সংশোধিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫৩ কোটি টাকা। শতভাগ কাজ শেষ না হলেও সড়কটিতে যান চলাচল করছে। এখন ফুটপাতের সংস্কার ও সড়ক বাতি স্থাপনের কাজ চলছে।

প্রকল্প পরিচালক আসাদ বিন আনোয়ার বলেন, চার লেনের এ সড়কে এরই মধ্যে যান চলাচল শুরু হওয়ায় সুফল পাচ্ছে নগরীসহ উত্তর চট্টগ্রামের মানুষ। এ প্রকল্পের মাধ্যমে পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও উত্তর চট্টগ্রাম এবং নগরেরও একটি অংশের মানুষ মূল শহরের পরিবর্তে সড়কটি ব্যবহার করে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় যেতে পারছে।

জানে আলম দোভাষ সড়ক:দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাথে নগরীর যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ করতে পুরাতন বাকলিয়া থানা এলাকা থেকে চন্দনপুরা পর্যন্ত ১ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার বাকলিয়া এক্সেস সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরবর্তীতে এ প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ২১৭ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়।প্রকল্প পরিচালক কাজী কাদের নেওয়াজ বলেন, এ সড়কের সুবিধাভোগী হবেন দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ। তারা কোনো প্রকার ভোগান্তি ও যানজট ছাড়াই চকবাজার ও এর আশপাশের এলাকায় দ্রুত সময়ের মধ্যে পৌঁছে যাবেন।

তিনি বলেন, চকবাজার এলাকাকেন্দ্রীক অসংখ্য স্কুল, কলেজ ও কোচিং সেন্টার রয়েছে। দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে আসা শিক্ষার্থীদের আগে কোতোয়ালী-আন্দরকিল্লা কিংবা বহদ্দারহাট হয়ে চাকবাজার যাতায়াত করতে হতো। এখন তাদের দূরত্ব অনেক কমে যাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

Back to top button