বিশেষ প্রতিনিঃ
খুলনায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮১৯ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৪ জন। এদিকে, ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন রোগীরা। বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষার সুবিধা থাকার পরও বাইরে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠানো হচ্ছে রোগীদের। চিকিৎসকদের পছন্দ মতো প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষা করানো না হলে চিকিৎসকরা রিপোর্ট দেখছেন না বলেও অভিযোগ করেছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। ফলে বাধ্য হয়ে এক টেস্ট দু’বার করতে হচ্ছে ডেঙ্গু রোগীদের। এতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হচ্ছে বলেও দাবি তাদের। খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর এই হাসপাতালে মোট ৬১০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হন। এর মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪ জন মারা গেছেন। বর্তমানে খুলনা মেডিকেলে ৬৯ জন ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) পর্যন্ত নতুন ভর্তি ১৬ জন। আর
ছাড়পত্র পেয়েছেন ৬১০ জন।
খুলনা জেলা সিভিল সার্জন অফিসারের কার্যালয়ের সূত্র জানায়, জেলায় মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০৯ জন। তবে এর মধ্যে কেউ মারা যায়নি। বর্তমানে ভর্তি রোগী ২০ জন, ছাড়পত্র পেয়েছেন ১৮৪ জন।
আর উন্নত চিকিৎসার জন্য এখান থেকে রেফার্ড করা হয়েছে ৪ জনকে। ডেঙ্গু রোগী বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের মিহির মন্ডল বলেন, আমি গত শুক্রবার খুমেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। এখান থেকে কিছু ওষুধ দিয়েছে, বাকিগুলো বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। আর ডেঙ্গু রোগীদের হাসপাতালে টেস্ট হয় না। টেস্ট বাইরে থেকেই করাতে হয়। তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, সন্ধানী থেকে বাধ্যতামূলক টেস্ট করাতে হয়। অন্য কোনো জায়গা থেকে টেস্ট করলে ডাক্তার দেখেন না। বাইরে থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে আর্থিক সমস্যা হচ্ছে আমাদের। ডেঙ্গু আক্রান্ত খুমেক হাসপাতালে ভর্তি এক রোগীর বাবা মোঃ তৌফিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হাসপাতালে ব্যবস্থা না থাকায় বাইরে থেকে ৮টি টেস্ট করাতে হয়েছে। এসব টেষ্ট আমরা হাসপাতালের সামনে থেকে করছিলাম, কিন্তু ডাক্তার দেখে না। বলে ‘সন্ধানী’ থেকে করতে হবে। সেই টেস্টগুলি আবারো করতে হয়েছে। সাড়ে ৫ হাজার টাকা লেগেছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত পরিচালক) ডা. নিয়াজ মুস্তাফী বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের টেস্ট সরকারি রেটে হাসপাতালেই করা হয়। হাসপাতালে টেস্ট করতে মাত্র ১৫০ টাকা লাগে। তবে হাসপাতালে যে টেস্টগুলো হয় না- সেগুলি করতে বাইরে পাঠানো হতে পারে।
ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে আমাদের কোনো ডাক্তার এ রকম করার কথা না। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ডা. নিয়াজ মুস্তাফী জানান, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আলাদা কোনো ডেঙ্গু ইউনিট নেই। জায়গার স্বল্পতার জন্য মেডিসিনের প্রতিটি ওয়ার্ডে ২০ জন করে ডেঙ্গু রোগী রাখা হয়েছে। করোনার ২০০ বেডের একটা ইউনিট খালি আছে, কিন্তু সেটা আমরা ইচ্ছা করলে ডেঙ্গু ইউনিট হিসেবে ঘোষণা করতে পারি না মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া বলেন তিনি। খুলনা সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোঃ আনিছুর রহমান বলেন, নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডে প্রতিদিন সকালে ১০ লিটার পানিতে ১০০ এম এল লারভিসাইড ওষধ মিশিয়ে ড্রেনে স্প্রে করা হচ্ছে। এ ছাড়াও সেন্ট্রালী ২০ জন স্প্রেম্যান ক্রাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রতিদিন ৪টি ওয়ার্ডে স্প্রে করছেন। আর এটা ডেঙ্গুর জন্য অতিরিক্ত ডোজ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও প্রতিটি ড্রেনে সপ্তাহে একবার লারভিসাইড ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। ফগার মেশিন দ্বারা মশক নিধনে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে ১৫ লিটার করে। আমরা আগের তুলনায় দ্বিগুণ ওষুধ ব্যবহার করছি। এছাড়ও নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার, ভাসমান ময়লা, পেড়ি মাটি কাটা, বর্জ্য ও পানি পরিষ্কার করা হচ্ছে। খুলনা সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. স্বপন কুমার হালদার বলেন, এ মাসে ডেঙ্গু সম্পর্কে নগরবাসীকে সচেতন করতে ৫০ হাজার লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। নগরীর ৭টি স্পটে মাকিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আমাদের সেঙ্গে যে এনজিওগুলো কাজ করে তাদের নিয়ে সভা করে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সিটি করপোরেশনের ৭০ জন ও বিভিন্ন এনজিওসহ ৩০০ স্বাস্থ্য কর্মী মাঠে কাজ করছেন।