মোঃ নাজমুল হাসান বিশেষ প্রতিনিধিঃ
আগাম জাতের শিম চাষে খুশি পাবনার কৃষকরা, ছবি:
পাবনার আটঘরিয়ায় শীতের আগেই বাজারে উঠতে শুরু করেছে আগাম জাতের শিম। ভালো ফলন ও দাম পাওয়ায় খুশি কৃষকরা। মাটি থেকে সর্বোচ্চ ৪ থেকে ৫ ফুট উচু বাঁশের মাচা তৈরি করে আবাদ করা হয়েছে উচ্চ ফলনশীল আগাম জাতের এই শিম। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি শিম দুইশ থেকে দুইশ ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিকেল হলেই চাষিরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শিম পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকেন।চলতি মৌসুমে আটঘরিয়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার কৃষকরা বিভিন্ন জাতের শিমের আবাদ করছেন। এর মধ্যে শিমের উল্লেখযোগ্য জাত হলো- অটো, রূপবান, চকলেট, কেরালা জাতের শিম আবাদ করেছে বেশি। এছাড়াও স্থানীয় জাতের শিমও আবাদ হয়েছে ব্যাপক। বর্তমানে আবহাওয়া ভালো থাকার কারণে ফলন ভালো হচ্ছে বলে দাবি কৃষকদের।কৃষকরা জানান, অতিমাত্রায় বৃষ্টি হলে এবং পরে গরমে গাছের ফুলগুলো ঝড়ে পড়ে। একই সঙ্গে গাছে পঁচন দেখা দেয়। আগাম জাতের এই শিমের বীজ জমিতে সাধারণত জুন মাসে বপন করতে হয়। বীজ বপনের ৩৫ থেকে ৪০ দিন পর গাছ গুলোতে ফুল আসতে শুরু করে। সাধারণত ৫ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত এই শিমের ফলন পাওয়া যায়। উপজেলার সব এলাকায় কমবেশি শিম আবাদ হলেও আটঘরিয়া উপজেলার মাজপাড়া, চাঁদভা, সড়াবাড়িয়া, খিদিরপুর ও দেবোত্তরসহ কিছু এলাকায় বেশি পরিমাণে আগাম জাতের শিম আবাদ হয়েছে।উপজেলার ধলেশ্বর গ্রামের কৃষক মোস্তফা জানান, তিনি কয়েক বছর ধরে আগাম জাতের শিমের আবাদ করছেন। এবারও এর আবাদ করেছেন তিনি। ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় শিম আবাদ করে সন্তুষ্ট বলেও জানান তিনি।একই এলাকার শিম চাষি রওশন জানান, এবছর আমি আমার ২ বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছি। ফলন মোটামুটি ভালো। ইতিমধ্যে আমি ১০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করেছি। সামনের চালানে ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করতে পারবো।আরেক কৃষক ওসমান জানান, তিনি এবছর ৫ বিঘা জমিতে অটো জাতের শিম চাষ করেছেন। আশা করছি, বিঘা প্রতি ১ লক্ষ টাকা করে শিম বিক্রি করা সম্ভব হবে।শিম চাষি নজরুল বলেন, বর্তমানে শিমের আবাদে নানা উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় কিছুটা বেড়েছে। বীজ লাগানোর পর থেকে এক বিঘা জমিতে শিম আবাদ করতে বীজ, সার, শ্রমিক ব্যয় ও সেচ সহ আনুসঙ্গিক নানা ব্যয় হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এরপরও বিঘা প্রতি প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা লাভ হবে বলে ধারণা করছি।
তিনি বলেন, শিমের গাছ মাচায় উঠে গেলে ফুল এবং ফল ধরার সময় পোকা দমন এবং পচন রোধে প্রায় প্রতিদিন ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়। ৫০ থেকে ৫৫ দিনে গাছে ফুল ও ফল ধরে।উপজেলার মাজপাড়া চাঁদভা, খিদিরপুর, সড়াবাড়িয়া, মুলাডুল এবং ধলেশ্বর মাদ্রাসার মার্কেটে শিমের আড়ৎ বসে। এখানকার একাধিক পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, তারা ঢাকায় পাঠানোর জন্য এই এলাকার শিম সরবরাহ করে থাকেন। চলতি বছরের প্রথম দিকে প্রতি কেজি শিম ২০০ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দীর্ঘসময় ধরে এই দামটা চলমান আছে।আটঘরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সজিব আল মারুফ জানান, মৌসুমের আগেই এ শিম বাজারে উঠানো সম্ভব হওয়ায় আগাম জাতের শিম চাষে অধিক লাভ। ফলে এটি চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেশি। ভালো ফলন পেতে আমরা নিয়মিতই কৃষকদের সাথে যোগাযোগ রাখছি, বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে পরামর্শ দিচ্ছি। তিনি জানান, গত বছর আটঘরিয়ায় ১৫’শ হেক্টর আগাম জাতের শিম চাষ করা হয়েছিলো। এবছরে চলতি মৌসুমে ১৫শ ৫৩ হেক্টর জমিতে শিম চাষ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি