রাজশাহীর মোহনপুরে ব্যাংকে জমি বন্ধক রেখে ঋন বন্ধকী জমি বিক্রয়ে গ্রাহক ও ম্যানেজারের প্রতারনা
মোঃ আলাউদ্দীন মন্ডল রাজশাহীঃ
ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক ইসলামি ব্যাংকের শাখাগুলোতে ঋণের নামে চলছে হরিলুট। ঋণ বিতরণের কোনো নীয়মনীতি মানা হচ্ছে না। নামসর্বস্ব কাগুজে প্রতিষ্ঠানে বিপুল পরিমাণে টাকা ঢেলে দিয়েছে ইসলামি ব্যাংক। বাস্তবে এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্ব নেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ঋণের নামে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের খোলসে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র ফলে সময় পার হলেও আদায় হচ্ছেনা ঋনের টাকা।
রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার রায়ঘাটি এলাকার বৃ-হাটরা গ্রামের শামসুল আলম (৫০) মিনহাজ কৃষি বিতান নামে একটি নাম সর্বস্ব ভূয়া প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, কেশরহাট শাখা হতে প্রায় পয়ষট্টি লাখ টাকা ঋন নেন। ব্যাংকে মর্গেজ দেন সাড়ে আট বিঘা জমি। মর্গেজ দেওয়া জমির মধ্য ১৫ শতাংশ জমি অন্যের নামে আছে। যার মর্গেজ ভ্যালু ১৫ লাখ টাকা। যা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জেনে বুঝে মর্গেজ গ্রহণ করেন। মিনহাজ কৃষি বিতান প্রোপাইটর সামসুল সময়মত ঋন পরিশোধে ব্যর্থ হলে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের চাপে পড়েন শাখা প্রধান মো: সিরাজুল ইসলাম। বেরিয়ে আসে ঋন প্রদানের আসল তথ্য।
ম্যানেজার সিরাজুল ইসলাম তার শাখার সুনাম ধরে রাখতে কোভিড-১৯ বিশেষ সুবিধা সম্পন্ন ঋন পরিশোধ ব্যর্থ গ্রাহক শামসুল আলম ও তার স্ত্রী মোছাঃ কহিনুর বেগম সাথে যোগসাজশ করে কেশরহাট ইসলামি ব্যাংক শাখায় মর্গেজ রাখা জমির তথ্য গোপন করে ব্যাংকে মর্গেজ রাখা জমি কিনতে কৃষিবিদ মোঃ শফিকুল ইসলামকে অনুরোধ জানায়। ব্যাংক ম্যানেজার এর অনুরোধ ও আশ্বস্ততায় জমিটি কিনতে রাজি হন শফিকুল ইসলাম। এসময় ম্যানেজার কক্ষে বসে কহিনুর বেগম ও সামসুলের উপস্থিতিতে ৫১ শতক জমির দরদাম ঠিক নির্ধারণ করেন ম্যানেজার নিজে। যার চুয়াল্লিশ লাখ টাকা। ব্যাংক ম্যানেজার মিনহাজ কৃষি বিতান শামসুল আলম এর ঋন হিসাবে নগদ পনের লাখ টাকা জমা নিয়ে গত ১৩ জুন ২৩ মোহনপুর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে এসে ৫১ শতক জমি শফিকুলের নামে বায়নামা রেজিষ্ট্রি করিয়া দেন মোসাঃ কহিনুর বেগম। যাহার স্মারক নং-২৬৩৭/২৩।পরে জানাযায় বায়নাকৃত জমির মধ্য ১৫ শতাংশ জমি অন্যের নামে আছে। যা জেনে বুঝে ইসলামি ব্যাংক ম্যানেজার ও গ্রাহক শামসুল দম্পতি বিক্রয়ে প্রতারনা করেছে।
এদিকে জমিটি বায়নামা রেজিষ্ট্রি হওয়ায় ঋন হিসাবে টাকা জমা হলে চাপ কমে যায় ব্যাংক ম্যানেজার এর এবং জমি বিক্রির টাকা পেয়ে লোন রিকভারি করে ঘুমিয়ে পড়েন শামসুল ও তার স্ত্রী কহিনুর বেগম।
বায়নামা চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ছয় মাসের মধ্যে শামসুল আলম ও তার স্ত্রী কহিনুর বেগম ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলামকে জমি রেজিষ্ট্রি করিয়া দিবেন। এদিকে ছয় মাস অতিবাহিত হতে চললেও শামসুল দম্পতি জমি আজকাল রেজিষ্ট্রি করে দিবেন বলে শফিকুলকে দিনের পর দিন ঘোরাইতে থাকে। সর্বশেষ গত ১০ডিসেম্বর শামসুলের বাড়িতে তার ভাইদের নিয়ে স্থানীয় মেম্বার ও এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ মিলে সিদ্ধান্ত নেন গত ১২ ডিসেম্বর ২৩ মোহনপুর সাব-রেজিঃ অফিসে উক্ত জমিটির পূর্নাঙ্গ রেজিষ্ট্রি করে দিবে শামসুল দম্পতি। নির্ধারিত তারিখ ও দিনে ব্যবসায়ী শফিকুল স্বাক্ষীদের নিয়ে মোহনপুর সাব-রেজিঃ অফিসে সারাদিন বসে থাকলেও আসেনি শামসুল ও তার স্ত্রী কহিনুর বেগম। নিরুপায় হয়ে ব্যবসায়ী শফিকুল কখন ব্যাংক ম্যানেজারের দ্বারে কখন শামসুলের বাড়িতে ঘুরেও জমি রেজিষ্ট্রি পাননি। উল্টো ব্যবসায়ী শফিকুলকে সামসুল ও তার বউ কহিনুর হুমকি ধামকি দিয়ে বলে বাড়াবাড়ি করলে ভবিষ্যতে খুবই খারাপ হবে।
বিষয়টি নিয়ে শফিকুল ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩
মোহনপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন। এঘটনায় সামসুল ও তার বউ কহিনুরকে ডেকে পাঠায় আদালত। তারা আদালতে হাজির না হলে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। পরে ২১শে ফেব্রুয়ারী বুধবার রাতে গ্রেফতারি পরোয়ানা মুলে কহিনুরকে আটক করে মোহনপুর থানা পুলিশ। ২২ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার কহিনুরকে আদালতে চালান দেয় মোহনপুর থানা পুলিশ।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও থানা সুত্রে জানাগেছে,
শামসুল আলম তার জমি স্ত্রী মোছাঃ কহিনুর বেগমের নামে জমি রেজিষ্ট্রি করিয়া দেন। এরপর ৩৭ শতক জমি স্বামী ও স্ত্রী দু’জন মিলে গত ২০২১ সালে একই এলাকার সমতুল্লা খামারুর ছেলে আব্দুল জব্বারের কাছে দশ লাখ টাকা মূল্য নির্ধারন করে নগদ নয় লাখ টাকা বায়না নেন। সময়মত জমি রেজিষ্ট্রি করে দেওয়াতো দুরের কথা শামসুল ও তার স্ত্রী জব্বারকে নাকে দড়ি দিয়ে আঠারো মাস ঘুরানোর পরে থানায় অভিযোগ হলে স্থানীয় শালিসদারদের মধ্যস্থতায় বায়নার টাকা ফেরত পায় আব্দুল জব্বার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার কিছু গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা জানান, শামসুল ও তার স্ত্রী কহিনুর বেগম উচ্চমানের প্রতারক। তারা স্বামী স্ত্রী দু’জনে মিলে জমি বিক্রয়ের নামে সহজ সরল মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছে।
এবিষয়ে জমিক্রেতা ভুক্তভোগী শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার অনেক দিনের স্বপ্ন বেকারত্বদের কর্ম সংস্থান তৈরী করতে কেশরহাটের আশে পাশে একটা ফিড মিল তৈরী করবো। এমন সময় ইসলামি ব্যাংক ম্যানেজার সিরাজুল ইসলাম তার গ্রাহক শামসুল আলমকে ঋনের দায় থেকে বাঁচাতে আমার কাছে বায়নামাকৃত জমির প্রকৃত তথ্য গোপন করে জমি কিনতে বলেন। ব্যাংক ম্যানেজারের কথার ফাঁদে পড়ে আস্থা ও বিশ্বস্ততার জায়গা তৈরী হয়। ব্যাংক ম্যানেজার শামসুল ও তার স্ত্রীকে ডেকে নিয়ে ব্যাংকে বসে ৫১ শতক জমির দাম ৪৪ লাখ টাকা নির্ধারণ করে আমি তাতে রাজি হয়।
গত ১৩ জুন ২৩ মোহনপুর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে জমিটি বায়নামা রেজিষ্ট্রি করি। এসময় ব্যাংক ম্যানেজার সিরাজুলের কথায় শামসুলের প্রতিষ্ঠান মিনহাজ কৃষি বিতান এর হিসাবে ১৫ লাখ টাকা জমা করতে বলেন এবং আমি সেই টাকা জমা করি। এরপর জমিতে কোন সমস্যা আছে কি না, সেটা জানতে বায়নামা রেজিষ্ট্রি করার পর পত্র পত্রিকায় আইনগত বিঙ্গপ্তি জারি করি। সব কিছু ঠিকঠাক চললেও বায়নামা রেজিষ্ট্রি মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। এ অবস্থায় কহিনুর বেগম, শামসুল ও ব্যাংক ম্যানেজার সিরাজুল ইসলাম আমাকে জমি রেজিষ্ট্রি না দিয়ে কালক্ষেপন করে আসছে। এখন জমিও পাচ্ছিনা, টাকাও ফেরত পাচ্ছিনা। জম