কামরুল ইসলাম চট্টগ্রামঃ
চট্টগ্রামের ১৯০টি ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম স্থবির হয়ে গেছে। উন্নয়ন কার্যক্রম তো দূরের কথা, স্বাভাবিক জাতীয়তা সনদ এবং জন্মনিবন্ধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোও হচ্ছে না। এতে করে দুর্ভোগে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। পাসপোর্ট করা, জমি রেজিস্ট্রি, এনআইডি সংক্রান্ত কাজসহ সবকিছু বন্ধ রয়েছে। কবে নাগাদ ইউনিয়ন পরিষদগুলো সচল হবে তা জানা যায়নি।
স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের গুরুত্ব অপরিসীম। তৃণমূল পর্যায়ের এই সংস্থার ওপর নির্ভরশীল হাজার হাজার মানুষের প্রাত্যহিক অনেক কর্মকাণ্ড। জাতীয়তা সনদ ছাড়া কোনো কাজ হয় না। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত জাতীয়তা সনদ ছাড়া পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, এনআইডি, মৃত্যু সনদ, ওয়ারিশান সনদসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করা সম্ভব হয় না। চট্টগ্রামে রোহিঙ্গাদের কারণে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দেওয়া জাতীয়তা সনদকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ এলাকার রাস্তাঘাট এবং ব্রিজ কালভার্টের উন্নয়নসহ নানাভাবে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করে। পরিচালিত হয় গ্রামীণ আদালত, যাতে গ্রামাঞ্চলের হাজার হাজার অভিযোগের মীমাংসা ঘটে। এর ফলে কোর্ট বা থানা পর্যন্ত যেতে হয় না। স্থানীয় সরকার হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রমের ওপর ওই এলাকার কয়েক লাখ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বহুলাংশে নির্ভর করে। চট্টগ্রামের ১৬টি উপজেলায় ১৯০টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। এসব পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যানদের প্রায় সকলেই আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা। এদের অনেকে এলাকায় জনপ্রিয় এবং ভালো মানুষ হিসেবে দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করলেও সরকার পতনের সাথে সাথে সকলে গা ঢাকা দিয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদের অধিকাংশ চেয়ারম্যানের বাড়িতে হামলা ও লুটপাট হয়েছে। আগুন দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় ভালো মানুষ হিসেবে চিহ্নিত চেয়ারম্যানরাও গা ঢাকা দিয়েছেন। এর খেসারত দিতে হচ্ছে এলাকার সাধারণ মানুষকে। তারা জাতীয়তা সনদ এবং জননিবন্ধন করতে না পারায় তাদের গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজ আটকে রয়েছে।
রাউজানের ডাবুয়া এলাকার একজন বাসিন্দা গতকাল আক্ষেপ করে বলেন, আমি আজ (গতকাল) শহর থেকে গ্রামে গিয়েছিলাম চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্য। গিয়ে দেখি কেউ নেই। আমার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। জরুরিভাবে ভারত যাওয়া দরকার। একটি পাসপোর্ট করতে হবে। কিন্তু পাসপোর্ট অফিস খোলা থাকলেও চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট নিতে না পারায় আবেদন করতে পারছি না।
তিনি বলেন, চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট স্বাভাবিকভাবেই কেউ আগেভাগে নিয়ে রাখেন না। প্রয়োজনের সময় ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে সংগ্রহ করে কাজ সারেন। আমাকে এখন সংকটে পড়তে হলো। চেয়ারম্যান কখন আসবেন খবর নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছেন না।
মীরসরাইয়ের মগাদিয়া এলাকার একজন বাসিন্দা বললেন, আমার বাচ্চার জন্মনিবন্ধন করানো দরকার। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদে কেউ নেই। সব কাজ বন্ধ। কি যে করব বুঝতে পারছি না।
সীতাকুণ্ডের বগাচতর এলাকার একজন বাসিন্দা গতকাল আজাদীকে জানান, জরুরি কাজে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েছিলাম। কিন্তু গিয়ে শুনি চেয়ারম্যান সাহেব এলাকায় নেই। তাই ইউনিয়ন পরিষদের সব কাজ বন্ধ। আমি শহর থেকে গিয়েছিলাম। কাজ না করে ফেরত আসতে হয়েছে। আমার একটি ওয়ারিশান সার্টিফিকেট দরকার। কিন্তু সেটি করতে না পারায় আমার পরিবার ক্ষতির মুখে পড়ছে।
জানা গেছে, প্রতিটি এলাকার গ্রামীণ পর্যায়ে যতগুলো উন্নয়ন কাজ চলছিল সব বন্ধ হয়ে রয়েছে। কোথাও ঠিকাদার কাজ করছেন না। স্থানীয়রা বলেছেন, বিশেষভাবে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে ইউনিয়ন পরিষদগুলো চালু করা হলে সাধারণ মানুষের উপকার হতো। ইউনিয়ন পরিষদ ভেঙে দেওয়ার প্রয়োজন হলে তা করে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে হলেও স্বাভাবিক কার্যক্রমগুলো সীমিত পরিসরে চালু করা দরকার। না হয় মানুষের দুর্ভোগ আরো বাড়বে।