চট্টগ্রাম

মন্দির ও গির্জা রক্ষায় পাহারা দিচ্ছে ছাত্ররা

কামরুল ইসলাম চট্টগ্রামঃ
শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর নগরীর ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়, মন্দির ও গির্জা রক্ষায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে পাহারা বসিয়েছে শিক্ষার্থীরা। দুর্বৃত্তদের হাত থেকে রক্ষার জন্য নগরীর পাশাপাশি জেলার প্রতিটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পাহারা দেওয়া হচ্ছে। একই সাথে নগরীর মূল সড়কে রাস্তার পরিষ্কারের পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকাও পালন করেছে তারা। গতকাল মঙ্গলবার বিভিন্ন সড়ক ও মন্দির, গীর্জা ঘুরে এসব তথ্য জানা যায়।সরেজমিন দেখা গেছে, গত সোমবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি দল প্রবর্তক এলাকার ইসকন মন্দির ও প্রবর্তক মন্দিরে যান। তারা মন্দিরে দায়িত্বরত ব্যক্তি ও ধর্মগুরুদের সঙ্গে দেখা করেন। তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন। পরে শিক্ষার্থীদের একটি দল সেখানে পাহারার ব্যবস্থা করেন।নগরীর হালিশহর এলাকা বিভিন্ন মন্দিরে দলবেঁধে পাহারা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জনতা। সেখানে মন্দিরে পাহারার ব্যবস্থা করাদের অন্যতম সাংবাদিক নুর নবী রবিন। তিনিসহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী জনতাকে নিয়ে রাতভর মন্দির পাহারায় ছিলেন।শিক্ষার্থী নুর নবী রবিন বলেন, ‘মন্দির ও গির্জা রক্ষায় আমরা হালিশহরের প্রতিটি এলাকায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে মাঠে আছি। এভাবেই আমাদের এগিয়ে আসতে হবে একে অপরের বিপদে। বিপ্লব বেহাতের কোন সুযোগ দেওয়া হবে না।একইভাবে হাটহাজারী কালি মন্দির পাহারা দেন হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্ররা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি দল নন্দীরহাট ও ফতেয়াবাদ এলাকার মন্দির পাহারা দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসেন।এছাড়া চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি স্থানে সংখ্যালঘুদের উপসানালয় রক্ষায় অনেকেই এগিয়ে আসেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও এ নিয়ে সোচ্চার দেখা গেছে সবাইকে। ফলে চট্টগ্রামে কোন মন্দির-গির্জায় হামলার খবর পাওয়া যায়নি।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর গত সোমবার বিকেল তিনটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন থানা, আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও দলীয় নেতাদের বাসা, সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপ‚র্ণ স্থাপনা, কারাগারে হামলা হয়। সহিংসতায় একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া অর্ধশতাধিক আহত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে ভুল প্রমাণ করার জন্য পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় হামলা চালাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। চট্টগ্রামে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়, মন্দির ও গির্জায় যাতে কোনও ধরনের হামলা না হয়, এজন্য আমরা প্রতিটি জেলা-উপজেলায় কমিটি করে সোমবার সন্ধ্যা থেকে পাহারার ব্যবস্থা করেছি। পাশাপাশি চট্টগ্রামের প্রত্যেক সমন্বয়ককে উপাসনালয়সহ সরকারি স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিতে মাঠে থাকার নির্দেশনা দিয়েছি।ট্রাফিকের দায়িত্বে শিক্ষার্থীরা : সরকারের পতনের পর দেশের আইন-শৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বন্দরনগরীর বিভিন্ন মোড়ে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।নগরীর বিভিন্ন মোড়ে সরেজমিন দেখা যায়, সীমিত পরিসরে হলেও অনেকটা স্বাভাবিকভাবে চলছে গণপরিবহনসহ অন্যান্য যানবাহন। নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা সড়কগুলো কাজীর দেউড়ি মোড়ে মিলিত হওয়ায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে, লাগছে জট। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সকাল থেকেই বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ ট্রাফিকের কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের প্রচেষ্টায় এই মোড়ে যানবাহন চলাচলও অনেকটা স্বাভাবিক রয়েছে।এদিকে সকাল থেকে নগরীর কোথাও কোন ট্রাফিক, পুলিশ বা ব্যারিকেড দেখা যায়নি। সীমিত পরিসরে চলছে গণপরিবহনসহ সব ধরনের যানবাহন।বহদ্দারহাট মোড়ে শিক্ষার্থী আসমা আক্তার বলেন, দেশটা আবর্জনায় ভরে গেছে। আমরা সেগুলোকে পরিষ্কার করতে চাই। ২০১৮ সালের আন্দোলনে আমরা সফল হয়েছিলাম। এবারও আমরা সফল হয়েছি। বর্তমানে পুলিশ নিজেরাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে কর্মবিরতি পালন করছে, তাই আমরা দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছি। সেনাবাহিনী তাদের কাজ শুরু করলে আমরা সড়ক ছেড়ে দিবো। একই সাথে ট্রাফিকিং এর পাশাপাশি আমরা সড়কের ময়লা আবর্জনাও পরিষ্কার করছি। আমাদেরকে সাধারণ জনতাও সহযোগিতা করছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

Back to top button