মোঃ মিঠু মিয়া গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধিঃ
ভুয়া সনদে চাকরি করে সরকারি বিপুল পরিমানের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার কিশামত শেরপুর বহুমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোছা. খাদিজা খাতুনের বিরুদ্ধে।
খাদিজা খাতুন বিদ্যালয়টিতে সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) পদে ২০০১ সালের ১৯ এপ্রিল যোগদান করেন। পরে ২০০২ সালের ১ মে এমপিওভূক্ত হন তিনি। যার ইনডেক্স নম্বর- R-654316।
এদিকে, সহকারি শিক্ষক হিসেবে খাদিজা খাতুন নিয়মিতভাবে সরকারী বেতন ভাতা ভোগ করে আসছেন। অথচ দীর্ঘদিন পর খাদিজা খাতুনের বিপিএড সনদটি ভুয়াসহ তার নিয়োগ প্রক্রিয়া অবৈধ বলে উঠে আসে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আসা একটি অডিট টিমের কাছে।
চলতি বছরের ২ মে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের পরিদর্শক মো. আলমগীর রহমান ও মো. কাওছার রহমান বিদ্যালয়টিতে অডিটে আসেন। এসময় তারা বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-কর্মচারীর নিয়োগ, যোগদানসহ সকল সনদপত্র প্রদর্শন করতে বলেন। সেখানে সহকারি শিক্ষক খাদিজা খাতুন তার ২০১৪ সালের বিপিএড সনদ প্রদর্শন করেন। কিন্তু অডিট টিমের কর্মকর্তারা খাদিজা খাতুনের সনদটি ভুয়া উল্লেখ করে তার নিয়োগ প্রক্রিয়াই অবৈধ হিসেবে মন্তব্য করেন।
তাৎক্ষণিক এই ঘটনাটি প্রকাশ হলে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। একই সঙ্গে ভুয়া সনদে খাদিজা খাতুনের সহকারি শিক্ষকের চাকরি ও সরকারি বেতন ভাতা তুলে আত্মসাতের ঘটনায় ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন অভিভাবক ও এলাকাবাসী।
এদিকে, ভুয়া সনদে খাদিজা খাতুনের চাকরির ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন অভিভাবক ও এলাকাবাসী।
গত ১২ জুন করা লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্ত খাদিজা খাতুন অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। এমপিভুক্তের পর এ পর্যন্ত তিনি আনুমানিক ২০-২৫ লক্ষ টাকার বেতন-ভাতা অবৈধভাবে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। এ ঘটনায় খাদিজা খাতুনের বেতন-ভাতা বন্ধসহ তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানানো হয় লিখিত অভিযোগে।
বিদ্যালয়টির একাধিক অভিভাবকের অভিযোগ, ভুয়া সনদ সত্বেও খাদিজা খাতুন বছরের পর বছর চাকরি করছেন। বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক রেজোয়ানুর করিম বাবু খাদিজা খাতুনের আপন ভাই। আর বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাহমুদ মিয়া ছিলেন খাদিজা খাতুনের স্বামী। ম্যানেজিং কমিটির দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে মাহমুদ মিয়ার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতিসহ শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন ভাতা কোন কারণ ছাড়াই বন্ধের অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে গত ১৫ এপ্রিল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। যা তদন্তধীন রয়েছে।
বর্তমানে খাদিজা খাতুনের স্বামী মাহমুদ মিয়া ও প্রধান শিক্ষক তাজউদ্দিন অডিট টিমকে ম্যানেজের চেষ্টা করছেন। একই সঙ্গে অডিট টিমকে ম্যানেজের জন্য প্রধান শিক্ষক তাজউদ্দিন প্রত্যেক শিক্ষকের কাছে একমাসের বেতনের টাকা দাবি করেন বলেও অভিযোগ অভিভাবকদের। দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় সম্প্রতি সহকারি এক শিক্ষকের বেতন বন্ধ করা হয়েছে বলেও গুজ্ণ উঠেছে।
তবে অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি অভিযুক্ত সহকারি শিক্ষক খাদিজা খাতুনের। এছাড়া বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাজউদ্দিন আহম্মেদের বক্তব্য জানতে তার মুঠোফোনে বারবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।