নওগাঁ

নওগাঁর আত্রাই হাট কালুপাড়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার ও সভাপতির বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে

মোঃ আশরাফুল হুসাইন নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
নওগাঁর আত্রাই উপজেলার হাটকালুপাড়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার ও সভাপতির বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, অনিয়ম, দুর্নীতি ও প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় স্বেচ্ছাচারিতা করে ৩টি পদে নিয়োগের নামে প্রায় ৪৫ লাখ টাকার নিয়োগ বাণিজ্য এবং চাকরি দেয়ার নামে বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ সূত্র ও সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, শনিবার নিরাপত্তা কর্মী, আয়া এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মোট অংশগ্রহণ করেন ১৪ জন পরীক্ষার্থী। যে তিনজন নিয়োগ পেয়েছেন তাদের কাছে থেকে মোট ৪৫ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া চাকরি দেয়ার কথা বলে বেশ কয়েকজনের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েও নিয়োগ না দিয়ে টাকা ফেরত দিতে টালবাহানা করছেন মাদ্রাসা সুপার আবুল হোসেন ও সভাপতি আজাদ হোসেন কবিরাজ। স্থানীয় হাটকালু পাড়ার আকরাম হোসেন বলেন, ‘আমি মাদ্রাসায় নিরাপত্তাকর্মী পদে আবেদন করেছিলাম। তারপর মাদ্রাসা সুপার আবুল হোসেন ও সভাপতি আজাদ হোসেন কবিরাজ আমাকে চাকরি পাইয়ে দেয়ার কথা বলে ১০ লাখ নেয়। কিন্তু নিয়োগ পরীক্ষা দেয়ার পর জানতে পারি উক্ত পদে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে অন্য একজনকে নিয়োগ দিয়েছেন। পরবর্তীতে টাকা ফেরত চাইতে গেলে, তারা আমাকে নানাভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। আমি এর সুষ্ঠু সমাধানের দাবি জানাচ্ছি।’শামিমা খাতুন বলেন, ‘আয়া পদে নিয়োগের জন্য প্রথমে ১ লাখ ৯৫ হাজার এবং পরবর্তীতে আরও ২ লাখ টাকা দিয়েছিলাম, কিন্তু আরও বেশি টাকার বিনিময়ে অন্য একজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। টাকা ফেরত চাইতে গেলে আমার পরিবারের মা-বাবাসহ অন্য সদস্যদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন।’আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমি নিরাপত্তাকর্মী পদের জন্য ৩ লাখ টাকা দেই সভাপতি ও মাদ্রাসা সুপারের কাছে। পরে আরও ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলাম। মোট ১৩ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ হয়েছে আমার।’ শামিমার বাবা ইসমাইল আমীন বলেন, ‘এ মাদ্রাসায় আমার কিছু জমিও দান করা আছে। তবুও আমার মেয়ের নিয়োগের জন্য তারা ৩ লাখ ৯৫ হাজার নিয়েছে। তিনটি পদে যাদের নিয়োগ হয়েছে তাদের কাছে থেকে প্রায় ৪৫ লাখ টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করেছে।’স্থানীয় নিজাম উদ্দীন নামের বাসিন্দা বলেন, ‘আকরাম হোসেনের নিরাপত্তাকর্মী পদে নিয়োগের জন্য পরীক্ষার কয়েকদিন আগে রাতের বেলা ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন সভাপতি ও মাদ্রাসা সুপারের কাছে। আমি নিজেই সে সময় সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু তার নিয়োগ হয়নি, টাকাও ফেরত পায়নি।’অভিযোগ অস্বীকার করে মাদ্রাসার সভাপতি আজাদ হোসেন কবিরাজ বলেন, ‘নিয়ম মাফিক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। যারা যোগ্য তারাই নিয়োগ পেয়েছে। কোনো ধরনের প্রতারণা ও দুর্নীতি করা হয়নি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে মাদ্রাসায় গিয়ে সুপার আবুল হোসেনকে না পাওয়ায় মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ‘যারা অভিযোগ করছে তারা মিথ্যা কথা বলছে। আমরা কোনো ধরনের প্রতারণা ও নিয়োগ বাণিজ্য করিনি।’ এরপর তিনি ফোনটি কেটে দেন।এ বিষয়ে কথা হলে আত্রাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সঞ্চিতা বিশ্বাস বলেন, ‘এ নিয়ে এখনও কেউ অভিযোগ দেয়নি। আর এ নিয়োগ পরীক্ষার সঙ্গে ইউএনও হিসেবে আমি যুক্ত নই। এটা শিক্ষা বিভাগের বিষয়।’জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার লুৎফর রহমান বলেন, ‘নিয়োগের নামে প্রতারণা বা নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি আমাদের কাছে। অভিযোগ পেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তারপরও আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।
নওগাঁ।

Back to top button