চাঁদপুর প্রতিনিধিঃ
চাঁদপুরের লঞ্চঘাটের হোটেল গুলিতে অনিয়ম এর শেষ নেই দুই হোটেলের কেনাবেচার প্রতিযোগিতা নিয়ে চলছে মালেক ও খোরশেদের এক নামে দুটি খাবার হোটেল। আর এতে লঞ্চঘাটে খাবার খেতে আসা যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে দুই হোটেলের টানাহেঁচড়াময় নানা রকমের বিড়ম্বনা।
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) সরজমিনে লঞ্চঘাটে দুটি খাবার হোটেলের প্রবেশমুখে হোটেল বয়রা দাঁড়িয়ে যাত্রীদের হোটেলে নিতে প্রতিযোগিতা করতে প্রলোভন দেখিয়ে টানা হেঁচড়া করছেন। খাবার হোটেল ২টির নাম বড় অক্ষরে লিখে সাইনবোর্ডে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বিআইডব্লিউটিএ চাঁদপুরের ক্যান্টিন। এতে করে লঞ্চ টার্মিনালের এই ২ খাবার হোটেলকাণ্ডে নাজেহাল বন্দর কর্তৃপক্ষ।
তথ্য উপাত্তে দেখা যায়, চাঁদপুরের সিবিএ লাইসেন্সে ২০২২ এর ১ ফেব্রুয়ারি হতে ২০২৩ এর ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত অর্থাৎ ১ বছরের জন্য বিআইডব্লিউটিএ ক্যান্টিন পরিচালনায় ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে দায়িত্ব পান খোরশেদ বেপারী। আর এটি মানতে না পেরে ওপরমহলে তদবির করে প্রভাব বিস্তার করে কেন্দ্রীয় সিবিএ এর সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামের একক স্বাক্ষরে ২০২২ এর ১ মার্চ হতে ২০২৪ এর ২৮ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ ২ বছরের জন্য ক্যান্টিন পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে আসেন মালেক বেপারী। কিন্তু মালেক বেপারী কত টাকায় এ দায়িত্ব পেয়েছেন তা জানা যায়নি।
তাছারা দেখা যায়, চাঁদপুরে আধুনিক নৌ টার্মিনালের কাজ শুরু হচ্ছে বিধায় লঞ্চঘাটে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ হতে এখানে উচ্ছেদ কার্যক্রমে অবকাঠামোগত ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের তালিকা করা হয় ২০১৯ সালে। ওই সময় মালেক বেপারীর পূর্ব হতেই একক ক্যান্টিন থাকায় সে তালিকায় তার নাম থাকলেও ওই সময় খোরশেদ বেপারীর ক্যান্টিন না থাকায় তিনি ক্ষতিপূরণের তালিকা হতে বাদ পড়েন। আর এতে করে ২০২৩ সালের ১৪ জুন লঞ্চঘাটের ৭৪ জন ক্ষতিগ্রস্তকে মোট ৯০ লাখ ২৯ হাজার ৯১৯ টাকা দেওয়ার সময় মালেক বেপারী মোট পেয়েছেন ১৮ লাখ ১ হাজার ১৭২ টাকা। যদিও এর থেকে কর বাদ দিয়ে তিনি নগদ পেয়েছেন ১৬ লাখ ৯৩ হাজার ১০২ টাকা। অর্থাৎ হিসাব অনুযায়ী এখন এই দুজনেরই একজনেরও এখানে ক্যান্টিন পরিচালনার কথা নয়। তবুও তারা অদৃশ্য শক্তির বলয়ে প্রকাশ্যেই প্রভাব বিস্তার করে নিজেদের ক্ষোভময় প্রতিযোগিতা বজায় রাখতে ক্যান্টিন পরিচালনা করছেন।
স্থানীয়রা জানান, মালেক বেপারীর ক্যান্টিন উচ্ছেদ হওয়া সত্ত্বেও তিনি আরও বড় পরিসরে এখন নতুনরূপে ক্যান্টিন পরিচালনা করে আসছেন যা সম্পূর্ণ অবৈধ। আর সিবিএ চাঁদপুরের আহ্বায়ক সাত্তারকে ম্যানেজ করে তিনি এভাবে ক্যান্টিন চালাচ্ছেন। তিনি বিভিন্ন স্থানে ম্যানেজ করতে গিয়ে অনেক টাকা খরচ করায় এখন ক্যান্টিনে পচা-গলা ইলিশ মাছ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার বিক্রি করে বেশি লাভের আশায় ক্যান্টিন পরিচালনা করছেন। আমরা এসব নিম্নমানের খাবার পরিবেশনকারী ক্যান্টিন উচ্ছেদ দ্রুত দেখতে চাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, মালেক বেপারী যে এতগুলো টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে বিশ্বব্যাংক থেকে হাতিয়ে নিলো। তার ক্যান্টিনটি হচ্ছে বাঁশ ও কাঠের অবকাঠামো দিয়ে নির্মিত। এটির জন্য এত টাকা পাওয়ায় দুর্নীতি বা লুটপাট আছে কি না, সে বিষয়টিও সংশ্লিষ্টরা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে ক্যান্টিন পরিচালনাকারী মালেক বেপারী বলেন, আমার ক্যান্টিনের কাগজপত্র ঠিক করাসহ এটি পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলে বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়েছে সিবিএ চাঁদপুরের নেতা ছাত্তার। তিনি এ জেলায় প্রায় ২০ বছরেরও বেশি সময় থেকে নানাভাবে অনিয়ম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। আমি যদি অবৈধভাবে ক্যান্টিন পরিচালনা করি তাহলে পাশের খোরশেদের ক্যান্টিনও অবৈধ। প্রশাসন যদি আমাকে উঠাতে আসে তাহলে পাশেরটাও উঠাতে হবে। এ সময় তিনি পচা গলা ইলিশ ও নিম্নমানের খাবার বিক্রি করেন না জানিয়ে অন্যান্য তথ্য মিথ্যা বলে দাবি করেন।
অপর দিকে সিবিএ চাঁদপুরের আহ্বায়ক মো. ছাত্তার বলেন, আমি মালেক বেপারীর থেকে নানা অজুহাতে টাকা নিয়েছি, তা তাকে প্রমাণ দিতে বলেন। আমি ওনার থেকে টাকা নিতে যাব কেনো। সব জেলাতেই লঞ্চঘাটে ১টি ক্যান্টিন পায় সিবিএ স্থানীয়রা। অথচ চাঁদপুরের সিবিএ নেতাদের সঙ্গে কোনোরূপ আলোচনা না করে কেন্দ্রীয় নেতারা কীভাবে আরেকটি ক্যান্টিন বসানোর অনুমতি দেয়, তা বুঝে আসে না। তাছাড়া এই মালেক অনেক চালাক। তিনি ক্যান্টিনের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা পর্যন্ত করেছেন। পরে বিশ্বব্যাংক হতে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার খবর শুনে সে মামলা প্রত্যাহারের আশ্বাস দিয়ে মোটা দাগে ক্ষতিপূরণ পর্যন্ত বাগিয়ে নিয়েছেন। অথচ তিনি এরপরও ক্যান্টিন না সরিয়ে বরং উল্টো ক্যান্টিন আগের চেয়েও আরও বড় পরিসরে সাজিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছেন। এ সময় তিনি তার দায় এড়াতে অন্যান্য অভিযোগ ও কোনোরূপ আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন বলেও দাবি করেন।
এদিকে ক্যান্টিন উচ্ছেদ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএ চাঁদপুরের উপপরিচালক শাহাদাত হোসেন বলেন, আমরা দ্রুতই লঞ্চঘাটের ক্যান্টিন উচ্ছেদ করবো। কেউ যদি কারও সঙ্গে কোনোরূপ লেনদেন করার চেষ্টা করে আমাদের উচ্ছেদ ঠেকাতে চায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।