গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নাগরিকদের ভর্তুকি দিয়ে হলেও স্বাস্থ্যবীমার আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দিলেন আ’লীগের মেয়র প্রার্থী অ্যাড. মো. জাহাঙ্গীর আলম।
এছাড়া যানজট নিরসন, গার্মেন্ট শিল্পের আধুনিকায়ন, জলজট নিরসনে তুরাগ নদী খনন, বেকার সমস্যার সমাধানসহ অন্তত অর্ধশত অঙ্গীকার করলেন গাজীপুর মহানগর আ’লীগের এই সাধারণ সম্পাদক।
একান্ত এক সাক্ষাৎকারে জাহাঙ্গীর আলম নগরপিতা হলে গাজীপুরকে শান্তির শহরে রূপ দেয়ার মহাপরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ব্যাখ্যাও তুলে ধরেন তিনি।
নগরবাসীর জন্য স্বাস্থ্যবীমা পলিসি চালু ও তা বাস্তাবায়নের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ভোটে জয়লাভের পর স্বাস্থ্যবীমার অধীনে একাধিক হাসপাতাল গড়ে তোলা হবে এবং সেখানেই নগরবাসীকে ভর্তুকি দিয়ে স্বাস্থ্যসেব দেয়া হবে।
নগরীর ৫৭টি ওয়ার্ড নিয়ে রোডম্যাপ পাকা করার কথাও জানান তিনি। তিনি বলেন, রাজধানীর পাশে গাজীপুরকে আরও নিরাপদ করতে মাস্টারপ্ল্যানের অংশ হিসেবে একাধিক হাইওয়ে করতে চাই। নগরীকে যানজটমুক্ত করতে চারপাশে বৃত্তাকার হাইওয়ে ছাড়াও বিমানবন্দর থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত হাইওয়ে করতে চাই।
এছাড়া টঙ্গী-গাছা-কোনাবাড়ী-কাশিমপুর হয়ে আরেকটি হাইওয়ে হবে যার দৈর্ঘ্য হবে ৩৩ কিমি. এবং চওড়া ১৭৫ ফিট। এছাড়া বিমানবন্দর থেকে রাজেন্দ্রপুর পর্যন্ত রেলওয়ের পাশ দিয়ে এবং গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী বাইপাস পর্যন্ত হাইওয়ে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য হাইওয়ের পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
এছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে তুরাগ নদী খননের পরিকল্পনা আছে- উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসবই আমার নির্বাচনী ইশতেহারে তুলে ধরা হবে।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটি নিয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ৫৭টি ওয়ার্ডে ১২শ’ টিম কাজ করছে। প্রতি টিমে একশ’ থেকে দেড়শ’ পরীক্ষিত সদস্য রয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচনে বিপুল ভোটে নৌকার জয় হবে ইনশাআল্লাহ।
নতুন প্রজন্মকে আকৃষ্ট করা নিয়ে আ’লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমিও নতুন ও তরুণ। তরুণের স্বপ্নই আমার স্বপ্ন। গাজীপুরকে তরুণ প্রজন্মের বাসযোগ্য আধুনিক শহরে গড়ে তুলব।
হেফাজত ফ্যাক্ট কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গাজীপুরে ১৭শ’র মতো মসজিদ এবং অসংখ্য মাদ্রাসা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের ইমাম-খতিব এবং দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক রয়েছে। সবাইকে সহযোগিতা করেছি। তারা আমাকে প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন। আশা করি হেফাজত এবার আমার পক্ষে কাজ করবে।
গার্মেন্ট সেক্টরের আধুনিকায়ন নিয়ে তিনি বলেন, বিজয়ী হলে ৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করার পরিকল্পনা আছে। প্রস্তাবটি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দেয়া আছে। শ্রমিকদের আবাসন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৫০ বিঘা জমির ওপরে ১৫ তলাবিশিষ্ট একাধিক ভবন করার চিন্তা আছে।
স্থানীয় সরকারের সহযোগিতায় এ কাজ করতে চাই। এ ইস্যু নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। গাজীপুরে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ হাজার শ্রমিক পরিবার নিয়ে থাকেন। তাদের জন্য স্কুল, কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসা, মার্কেট, বিনোদন কেন্দ্র, খেলার মাঠ থেকে শুরু করে সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে সেখানে। শ্রমিকদের কর্মস্থলে যাতায়াতের জন্য বাস সার্ভিস চালু করা হবে।
প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে আ’লীগের এই মেয়র প্রার্থী বেকার সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমার একটি শিক্ষা ফাউন্ডেশন রয়েছে। তার মাধ্যমে আমি ২৩ হাজার শিক্ষার্থীকে নানাভাবে সহযোগিতা করছি।
নগরীর বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে পড়–য়াদের আধুনিক ও মানসম্মত শিক্ষার ব্যবস্থা করে তাদের চাকরির সংস্থান করব। মেয়র নির্বাচিত হলে বেকার সমস্যা থাকবে না।
নগরীর বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম চাহিদা পূরণে গাজীপুরে নিজস্ব বিদ্যুৎ প্লান্টের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বলেন, গ্যাস সরবরাহের জন্য সরকারের সঙ্গে এলএনজি বা পাইপলাইনে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে।
সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব একটি ব্যাংক ব্যবস্থা থাকার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন গাজীপুরের নগরপিতা হতে ইচ্ছুক এই আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি বলেন, ওই ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে স্থানীয় মানুষ যাতে কম সুদে ঋণ নিতে পারেন, সে ব্যবস্থা করা হবে। সিটি কর্পোরেশনের অধীনে একটি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করার স্বপ্নের কথা তুলে ধরেন তিনি।
দেশীয় গার্মেন্ট শিল্পকে অধিক গুরুত্ব দেয়ার কথা উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা সরাসরি বিদেশে পণ্য রফতানি করব। এতে লাভ বাড়বে। সে লক্ষ্যে একটি ফ্যাশন ডিজাইন প্রকল্প হাতে নেয়া হবে।
নগরীর অনুন্নত এলাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো এলাকা অনুন্নত থাকবে না। সুষম উন্নয়ন নীতিমালার আলোকে কাজ এগিয়ে নেয়া হবে। সেভাবেই বরাদ্দ দেয়া হবে।
দলীয় কোন্দল নিরসন প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি গাজীপুর মহানগরীর সভাপতি এবং গতবারের মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খানের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, আমাদের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। নৌকার প্রার্থীকে জিতিয়ে আনার জন্য যা যা করা দরকার, সবই করবেন বলে তিনি আমাকে কথা দিয়েছেন।
শুধু তা-ই নয়, তিনি আমার পক্ষে গণসংযোগও শুরু করেছেন। তিনি বলেন, আসলে আমাদের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। প্রতিপক্ষ এসব বলছে, তারা অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করছে।
বিভিন্ন ওয়ার্ডে একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। মেয়র প্রার্থীর জন্য এটা প্রতিবন্ধকতা কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কাউন্সিলর পদে একাধিক প্রার্থী থাকলেও তারা যেখানেই যাচ্ছেন, নিজের ভোটের সঙ্গে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাচ্ছেন। আমরা জানিয়ে দিয়েছি কাউন্সিলর পদে দলের পক্ষ থেকে একজনকে সমর্থন দেয়া হলেও মেয়র পদকেই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
সুষ্ঠু নির্বাচনে প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আপনার প্রত্যাশা কী- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি অবশ্যই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। ১৫ মের নির্বাচনে যেন ভোটাররা খুব সহজে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন, সে প্রত্যাশা থাকবে। আমি চাই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমে গাজীপুরবাসী তাদের পছন্দের মেয়রকে বেছে নিক।
গাজীপুরবাসী আপনাকে ভোট দেবে কেন- এমন প্রশ্নে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মাঠপর্যায়ে অনেক পরিশ্রম করেছি। নির্বাচনের প্রত্যাশা আমার দীর্ঘদিনের। সে লক্ষ্যে কাজ করেছি, বারবার তৃণমূলে ছুটে গেছি।
বিজয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করে জাহাঙ্গীর বলেন, আমি সাধারণ মানুষের সঙ্গে যেভাবে মিশি, কথা বলি, সহযোগিতা করি, দুঃসময়ে পাশে থাকি, এতে আশা করব তারা আমাকে ফিরিয়ে দেবে না। তাদের সার্বিক সহযোগিতায় আমি বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হব।
এক প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চেষ্টার কমতি নেই। এমন কোনো অন্যায় করিনি, যার জন্য আল্লাহ অখুশি হতে পারেন।
নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে নৌকার প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার প্রতিপক্ষ শুধু বিরোধিতার কারণে বিরোধিতা করছেন। যিনি নির্বাচন কমিশনে এ অভিযোগ করছেন, তিনি নিজেও জানেন আমি কতটা সৎ এবং স্বচ্ছভাবে জীবনযাপন করি।
আমার বিশ্বাস, তিনি তার দলের কথা বলতে গিয়ে অগত্যা আমার বিরোধিতা করেছেন। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে না। নির্বাচন কশিমনকে সার্বিক সহযোগিতার চেষ্টা করি।
হলফনামায় তথ্য গোপনের অভিযোগ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কোনো তথ্য গোপন করিনি। আমাকে বলা হয়েছে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি করেছি। তিনি বলেন, মানুষ আয় করে কিছু কিছু জমায়। কিন্তু আমি আয় করে জমাইনি বরং তার চেয়ে বেশি ব্যয় করেছি।
আমি ধার করে হলেও মানুষকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। এজন্য নির্বাচন কমিশনের হিসাবে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে।