রাজশাহী প্রতিনিধিঃ
রাজশাহীর বাঘায় মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় পড়ে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে মশিউর রহমান (৩৬) নামে এক শিক্ষকের জীবন। আদালতে প্রতারণা মামলার আসামি হয়ে চরম হতাশা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি । সে উপজেলা চক এনায়েত গ্রামের আব্দুল মতিন এর ছেলে
এবং উপজেলার কালিদাস খালি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক।
হয়রানিমূলক মিথ্যা ওই মামলা থেকে পরিত্রান পেতে মামলার বাদী একই গ্রামের মোঃ সোলায়মান হোসেনের ছেলে আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী শিক্ষক মশিউর রহমান ও তাঁর পরিবারবর্গ।
শুক্রবার ( ১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় বাঘা মডেল প্রেস ক্লাব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে ‘সাজানো মামলার’ কারণে নিজের ও পরিবারের দুর্বিষহ জীবনের বর্ণনা দেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মশিউর রহমান বলেন, আমি পেশায় একজন শিক্ষক। আমি উপজেলায় দুইবার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছি। আমার বিরুদ্ধে থানায় কিংবা আদালতে কোন মামলা মোকদ্দমা নেই। অথচ আব্দুল মান্নান সম্পূর্ণ হিংসাত্মক মনোভাব নিয়ে আমার বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলা দায়ের করেছেন। দায়েরকৃত অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি-২০২২ এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি-২০২২ ইং তারিখে আমার নিজ নামীও ব্যাংক একাউন্টে ( সোনালী ব্যাংক) যথাক্রমে ৯ লক্ষ ৫০ হাজার এবং ৩ লক্ষ টাকা জমি দেওয়ার শর্তে নিয়েছি। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত । প্রকৃত সত্য হলো, সাংসারিক বিশেষ প্রয়োজনে টাকার দরকার হলে আমার পিতা ১ একর ১২ শতাংশ জমি বিক্রয়ের ঘোষণা দেন। মামলার বাদী আমার পূর্ব পরিচিত । সে উক্ত সম্পত্তি ক্রয় করতে আগ্রহী হয়। সে মোতাবেক তিনি গত ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২২ তারিখে বড়াইগ্রাম সাব রেজিস্টার অফিসের মাধ্যমে নিজ নামে ১ একর ১২ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করে নেন। যার দলিল নম্বর ৫৩৮/২২। উক্ত জমির মোট মূল্যের মধ্যে ৯ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পরের দিন অর্থাৎ ১৫ ই ফেব্রুয়ারি ২০২২ এনআরবিসি ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করেন।
এরপর প্রায় দেড় বছর পর গত ৩০ এপ্রিল ২০২৩ আদালতে আমার বিরুদ্ধে ৪০৬ ও ৪২০ ধারায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলার সমন পেয়ে আমি তার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন সহ আইনি ব্যবস্থা নিতে চাইলে
তিনি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করবে বলে কথা দেন। কিন্তু মামলার তিন মাস পেরিয়ে গেলেও তিনি আমার বিরুদ্ধে আনিত মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাহার করেন নাই।
তিনি আরো বলেন, মিথ্যা মামলার কারণে এখন আমার ও আমার পরিবারের সদস্যদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। মামলার কারণে আমি কিছুদিন বাড়িতেও থাকতে পারিনি। সামাজিক ও মানসিকভাবে আমি ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমিসহ আমার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। আমি এই মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তি পেতে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি। আমি পরিবার পরিজন নিয়ে শান্তিতে বাঁচতে চাই।
সংবাদ সম্মেলন বিষয়ে আব্দুল মান্নান তার বক্তব্য বলেন, মশিউর আমার সাথে প্রতারণা করেছে। তার বাবার নামেও ২০২০ সাল থেকে প্রতারণার মামলা চলমান রয়েছে। আজ থেকে ৩ মাস আগে প্রায় ৪ মাস সে জেল খেটেছে।
আমার কাছে সে জমি দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছে। বিগত সময়ে আমি তার একাউন্টে টাকা দিয়েছি এবং তার বাবা আমাকে ৩ বিঘা ৭ কাঠা জায়গা রেজিস্ট্রার করেও দিয়েছে। সেই সরল বিশ্বাস থেকে আমি আবার ২ বিঘা জমি বাবদ তার একাউন্টে টাকা দিয়েছি সেই জমি আমাকে না দিয়ে আসলাম নামক এক ব্যাক্তির কাছে রেজিস্ট্রার করে দিয়ে আমার সাথে প্রতারণা করে।
পরে আমি টাকা ফেরত চাইলে মশিউর বলে, বকুল মাষ্টার আমার নামে মামলা করায় প্রায় ৭ মাস বেতন বন্ধ আছে। বেতন শুরু হলে আমি উত্তরা ব্যাংকে একটা লোন করে তোমার টাকা দিয়ে দিবো। এই ভাবে তাল বাহানা করে আমার টাকা দিতে দেরী করে । অবশেষে আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি।
জমি দেওয়ার কোন চুক্তিপত্র কিংবা অন্য কোন এভিডেন্স আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মন্নান বলেন, আমি সরল বিশ্বাসে টাকা দিয়েছি। আমার লিখিত কোন ডকুমেন্ট নেই।
সংবাদ সম্মেলনে মশিউর রহমানের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন তার পিতাসহ শতাধিক এলাকাবাসী।