চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের দক্ষিণ জেলা বিএনপির হাল কে ধরতে যাচ্ছে

কামরুল ইসলাম চট্টগ্রামঃ
নেতৃত্ব শূন্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির হাল কে ধরতে যাচ্ছে ? কাদের উপর আস্থা রাখবে দলের হাই কমান্ড? কারা আসছেন নেতৃত্বে? গতকাল দিনভর এসব প্রশ্নই ছিল দলটির তৃণমূলে নেতাকর্মীদের মধ্যে। কারণ গত রোববার বিলুপ্ত করা হয় দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক কমিটি। যে কোনো মুহূর্তেই ঘোষণা হতে পারে নতুন কমিটি। তাই স্বাভাবিকভাবে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের আছে নানা আলোচনা। আছে গুঞ্জনও। এসব গুঞ্জনের ভিড়ে পদ প্রত্যাশীরা ছুটছেন কেন্দ্রে। পদ পেতে ধর্না দিচ্ছেন সিনিয়র নেতাদের কাছে। চেষ্টা করছেন দলের হাই কমান্ডের কাছে নিজের অবস্থান তুলে ধরতে। সম্ভাব্য কমিটিতে পদ পেতে তদবির করছেন এমন ১৮ জন নেতার তথ্য এসছে গণমাধ্যমে। এর মধ্যে সভাপতি বা আহবায়ক পদে ৫ জন এবং সাধারণ সম্পাদক বা সদস্য সচিব পদে ৪ জন এগিয়ে আছেন। সম্ভাব্য কমিটির নেতৃত্ব আসতে পারে এদের মধ্য থেকে। এদিকে দলটির তৃণমূলের কর্মীরা বলছেন, ‘এক নেতা এক পদ’ নীতি থেকে সরে এসে চার বছর ১১ মাস আগে নগর বিএনপি’র তৎকালীন সহ–সভাপতি আবু সুফিয়ানকে আহ্বায়ক করা হয় দক্ষিণ জেলায়। দীর্ঘদিন নগরে রাজনীতি করেন তিনি। আবার তার বাড়ি কক্সবাজার জেলায়। দক্ষিণের স্থায়ী বাসিন্দা নেতৃত্ব না আসায় ক্ষোভ ছিল তৃণমূলের। এরপরও দলের সিদ্ধান্ত মেনে নেন সবাই। কিন্তু রাতের আঁধারে এস আলম গ্রুপের গাড়ি সরিয়ে নেয়ার অভিযোগ মাথায় নিয়ে গত রোববার সদস্য পদ হারান তিনি। একইদিন বিলুপ্ত করা হয় দক্ষিণ জেলার কমিটিও। এই অবস্থায় ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে দক্ষিণে রাজনীতি করেছেন এমন কাউকেই চান তারা। এছাড়া দলটির তৃণমূল কর্মীদের প্রত্যাশা, দলের বিগত ‘আন্দোলন–সংগ্রামে’ যারা সক্রিয় ছিলেন তারাই নেতৃত্বে আসুক। এগিয়ে আছেন যারা, সভাপতি বা আহবায়ক পদে আলোচনায় আছেন জেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শেখ মো. মহিউদ্দিন, সাবেক যুগ্ম আহবায়ক আলহাজ্ব আলী আব্বাস, সাবেক সহ–সভাপতি আলহাজ্ব ইদ্রীস মিয়া, সাবেক সহ–সভাপতি অ্যাডভোকেট ইফতেখার হোসেন চৌধুরী মহসিন। সাধারণ সম্পাদক বা সদস্য সচিব পদে আলোচনায় আছেন জেলা বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম–আহবায়ক লেয়াকত আলী, বাঁশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম সম্পাদক কামরুল ইসলাম হোছাইনী, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আসহাব উদ্দিন চৌধুরী, বিলুপ্ত কমিটির সদস্য মজিবুর রহমান, আনোয়ারা উপজেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব লায়ন মো. হেলাল উদ্দিন। বিএনপি’র স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে একজন সময়ের আলোচিত এস আলম গ্রুপের ঘনিষ্ট বলে পরিচিত। এছাড়া সাবেক সাংসদ ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার সঙ্গে ঘনিষ্টতার অভিযোগ আছে এক সাধারণ সম্পাদক প্রত্যাশীর বিরুদ্ধে।
লবিং করছেন যারা: সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ গাজী মোহাম্মদ শাহজাহান জুয়েল এবং সাবেক সাংসদ সরওয়ার জামাল নিজামও সভাপতি হওয়ার জন্য লবিং করছেন বলে দলটির কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে বিগত আন্দোলন সংগ্রামে এই দুইজন নিষ্ক্রিয় ছিলেন বলে অভিযোগ আছে। এ তালিকায় আছেন সাবেক ছাত্রদল নেতা শাখাওয়াত জামান দুলাল। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে বিলুপ্ত কমিটির সদস্য লোহাগাড়া উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ মিয়া, নাজমুল মোস্তফা আমিন, জিয়াউদ্দিন চৌধুরী আশফাক. পটিয়া উপজেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব মো. খোরশেদ আলম, আনোয়ারারা মো. মনজুর তদবির করছেন বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন। এছাড়া দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি প্রয়াত জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর ছেলে বিএনপি নেতা মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পাও লবিং করছেন বলে জানা গেছে। কপাল পুড়ল এনামের বিএনপি’র কেন্দ্রীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, গত জুন মাসে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করার পর গুঞ্জন ওঠে দক্ষিণ জেলা বিএনপিও বিলুপ্ত করা হবে। ওই সময় নতুন করে কমিটি করলে এনামুল হক এনামকে সাধারণ সম্পাদক বা সদস্য সচিব করা হবে জোর প্রচারণা ছিল। দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও এমন ইঙ্গিত দেন। পরবর্তীতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে কমিটি বিলুপ্তি ও গঠন প্রক্রিয়া বন্ধ রাখে কেন্দ্র। কিন্তু এস আলমের গাাড়ি পার করে দেয়ার ঘটনায় প্রাথমিক সদস্য পদও হারান তিনি। এর মধ্য দিয়ে সম্ভাব্য কমিটির পদ পাওয়ার সম্ভবনাও থাকল না।
যে নেতৃত্বের প্রত্যাশা: শেখ মো. মহিউদ্দিন গণমাধ্যম কে বলেন, এমন নেতৃত্ব আসুক যারা সাবেক ছাত্রনেতা। সেই ১/১১ সময় থেকে বিগত স্বৈরাচারী সরকারের মেয়াদকাল পর্যন্ত দুঃসময়ে যারা মাঠে ছিলেন এবং এ সময়ে আন্দোলন–সংগ্রামে যারা সক্রিয় ছিলেন তাদের মূল্যায়ন করা হোক। একইসঙ্গে হাইব্রিড’কে মূল পদে না রেখে তৃণমূলকে সম্পৃক্ত রেখে কমিটি দিলে সেটা তৃণমূলে গ্রহণযোগ্য হবে। যারা নির্লোভ এবং দলের প্রতি আনুগত্যশীল তাদের নেতৃত্বে আনলে দলের যে চাওয়া সেটা পূরণ হবে। বিগত সময়ে এমন লোককে নেতৃত্বে আনা হয় যিনি রাজনীতি করেছেন নগরে, আবার তার বাড়িও চট্টগ্রাম জেলা নয়। এমন কেউ যেন আর নেতৃত্বে না আসে সেটাই তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা।
কামরুল ইসলাম হোসাইনী গণমাধ্যম কে বলেন, যারা রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে বিতর্কিত নন, যারা স্বচ্ছ ইমেজের অধিকারী এবং দলের জন্য যাদের ত্যাগ আছে তাদের নিয়ে কমিটি হোক সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। বিতর্কিতদের দিয়ে কমিটি করলে আগের অবস্থা হবে এবং সেটা তৃণমূলে গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। গ কে বলেন, যারা আন্দোলন–সংগ্রামে ছিলেন, লোহাগাড়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সাবেক সদস্য সাজ্জাদ মিয়া বলেন মাঠে–ময়দানে সক্রিয় আছেন, যারা আন্দোলন করতে গিয়ে হামলা–মামলার শিকার হয়েছেন তাদের মূল্যায়ন করা হোক। বিগত সময়ে যারা মামলার শিকার হয়নি তাদের বিএনপি করারও অধিকার নেই। কারণ আন্দোলন থাকলেই মামলার শিকার হতেন তারা। আমি নিজেও ৩৪ মামলার আসামী। এমনকি ছাত্র–জনতার আন্দোলন চলাকালেও মামলা হয়েছে। আশা করছি দল মূল্যায়ন করবেন। সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০০৯ সালে: ২০০৯ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন করা হয়েছিল চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র কমিটি। ওইসময় জাফরুল ইসলাম চৌধুরীকে সভাপতি ও শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল। যা দলটির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া অনুমোদনও দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ২০১১ সালের এপ্রিলে আবারো পুর্নগঠন করা হয়। সেই সময় জাফরুল ইসলাম চৌধুরীকে সভাপতি ও গাজী শাজাহান জুয়েলকে করা হয় সাধারণ সম্পাদক ও শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দীনকে সহ–সভাপতি করা হয়। তিন বছরের জন্য গঠিত এ কমিটি আট বছর পাঁচ মাস দায়িত্ব পালন করার পর ২০১৯ সালের অক্টোবরে ভেঙে দেয়া হয়।
একইবছরের ২ অক্টোবর মহানগর বিএনপি’র সিনিয়র সহ–সভাপতি আবু সুফিয়ানকে আহ্বায়ক এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপি’র তৎকালীন সভাপতি মোস্তাক আহমেদ খানকে সদস্য সচিব করে দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ২০২৩ সালের ৭ মে কমিটির ৪ নং সদস্য এনামুল হক এনামকে কমিটির ১ম যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। আহ্বায়ক কমিটি গঠনের সময় বলা হয়, গঠিত কমিটির মেয়াদ হবে তিন মাস। তারা এই তিন মাসের মধ্যে দক্ষিণ জেলার আওতাভুক্ত প্রতিটি উপজেলা, থানা ও পৌরসভার কমিটি গঠন শেষে দক্ষিণ জেলার কাউন্সিল আয়োজন করবেন। কিন্ত চার বছর ১১ মাস দায়িত্ব পালন করেও কাউন্সিল করতে পারেনি তাই এই কমিটি ব্যর্থ কমিটি হিসেবে পরিচিত হয় কেন্দ্র কমিটির কাছে।

এই বিভাগের আরও খবর

Back to top button