চাঁদপুর

পুলিশের ক্রান্তিলগ্ন সময়ে অসহায় মানুষের পাশে মানবিক পুলিশ মানিক

মোঃ নবীন ভূঁইয়া, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
মানবিক পুলিশ মানিক একজন মানবসেবক এবং নিয়মিত রক্তদাতা। রক্ত প্রয়োজন, এমন কথা শুনলে তিনি অস্থির হয়ে যান রক্ত জোগাড় করে দিতে। এমনকি দেশের জনগণ ও অসহায় দুস্থদের পাশে দাঁড়িয়ে 
বিভিন্নভাবে দক্ষতা ও সফলতা দেখিয়েছেন। অন্যকে সাহায্য করতে কখনো দ্বিতীয়বার চিন্তা করেন না এ পুলিশ কর্মকর্তা। মানুষের রক্ত লাল। লাল ভালোবাসা বিলিয়ে শান্তি পান তিনি।

অদ্য ১১’ই আগষ্ট (রবিবার) বিকাল ৪:০০ ঘটিকার সময় চাঁদপুর শহরস্থ ‘নিউ ঢাকা ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে’ সুমি বেগম (৩০) নামক থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত এক মুমূর্ষ রোগীকে রক্তদান করেন ‘মানবিক পুলিশ মানিক’। তথ্য নিয়ে জানা যায় যে, সুমি বেগম বিগত বছর যাবৎ থ্যালাসেমিয়া ও রক্ত শূন্যতায় ভুগছেন। কোথাও রক্ত মিল না করতে পেরে এ পুলিশ কর্মকর্তার সরণাপন্ন হন তিনি। খবর পেয়েই সাথে সাথে ছুঁটে এসে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন ‘মানবিক পুলিশ মানিক’।

জানা যায়, লক্ষ্মীপুর জেলার সদর উপজেলার রোকনপুর গ্রামের মোঃ রুহুল আমিন’র ছেলে আবুল হোসেন মানিক। বর্তমানে তিনি চাঁদপুর জেলা গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) কর্মরত আছেন। চাকরির পাশাপাশি তিনি তার বেতনের অর্ধেক অংশ দিয়ে চাঁদপুর জেলা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অসহায় ও গরীব দুস্থদের মাঝে সাহায্য সহযোগিতা করে আসছেন বিগত বছর ধরে। তিনি আরো বলেন যে, স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা আমার পেশা নয়। এটি আমার নেশা।

উল্লেখ্য যে, কারো রক্তের প্রয়োজন পড়লে ‘মানবিক পুলিশ মানিক’ যত দ্রুত সম্ভব তা সংগ্রহ করে দেয়ার চেষ্টা করেন এবং তিনি নিয়মিত একটি ডায়েরি সংরক্ষণ করেন। কারো রক্ত বা সাহায্য লাগলে ‘মানবিক পুলিশ মানিক’ এর সঙ্গে মোবাইলে অথবা সরাসরি যোগাযোগ করেন। তখন এ পুলিশ কর্মকর্তা তাৎক্ষণিক ওই ব্যক্তিকে কোনো টাকা ছাড়াই রক্ত সংগ্রহ করে দেন এবং তাহার সাধ্যমত নিজ অর্থায়নে সাহায্য সহযোগিতা করার চেষ্টা করেন।

এদিকে মানবিক পুলিশ মানিক বিডি মেঘনা নিউজ২৪’র এই প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের উত্তরে জানান যে, মানুষ যখন খুব বিপদে পড়ে তখন অন্য কারো শরণাপন্ন হয়। বিশেষ করে যখন রক্তের প্রয়োজন হয়, তখন মানুষ দিশাহারা হয়ে ওঠে। কোথায় পাবে, কীভাবে পাবে, কার সঙ্গে যোগাযোগ করলে রক্ত পাওয়া যাবে? সেই চিন্তা যেন তখন আকাশ সমান হয়ে দাঁড়ায়। এরই মধ্যে একটা অন্যরকম অনুভূতি হয় তখন, যখন কারও বিপদে পাশে দাঁড়াতে পারি। রক্তের প্রয়োজনে মেসেজ বা ফোন পেলেই সাধ্যমতো চেষ্টা করি রক্ত জোগাড় করে দিতে। যখন রক্ত জোগাড় করে দেই তখন রক্ত গ্রহীতা ও তার আত্মীয়-স্বজনের হাসিমুখ দেখতে পাই। তখনকার অনুভূতি বোঝানোর মতো নয়। রক্ত জোগাড় করে দিলে মনে প্রশান্তি কাজ করে। কারো মুখে হাসি ফোটাতে পারার আনন্দ আসলেই অন্যরকম।

তিনি আরও বলেন, চাকরি জীবনে শুরু থেকেই নিজ অর্থায়নে অসুস্থ মানুষকে রক্ত সংগ্রহ ও সাহায্য সহযোগিতা করে দেয়ার এ কাজটি করে যাচ্ছি। এ পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার মানুষকে কোনো টাকা ছাড়াই রক্ত সংগ্রহ করে দিয়েছি। আমি নিজেই ৩২ বার রক্ত দিয়েছি। কোনো ব্যক্তির রক্তের প্রয়োজন জানালে বন্ধু, পরিচিতজন, নিকটাত্মীয়দের কাছে রক্তদানের জন্য অনুরোধে করি। সে ব্যক্তি সম্মত হলে অসুস্থ ব্যক্তিকে রক্তদান করা হয়।

সেখানে উপস্থিত থাকা চাঁদপুরের সৌরভ নামে একজন স্বেচ্ছাসেবী জানান, মানবিক পুলিশ মানিক’ দীর্ঘদিন ধরে মানুষকে বিনা টাকায় এবং নিজ পরিশ্রমে রক্ত দিয়ে সহযোগিতা করেন এবং করে আসছেন। তার এ কাজে আমরাও সহযোগিতার চেষ্টা করি। রক্তদান স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এতে অনেক মানুষ উপকৃত হয়।

প্রতিবেদকের শেষ প্রশ্নের জবাবে এ পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে পুলিশের এই ক্রান্তিলগ্ন কালে আমি ‘মানবিক পুলিশ মানিক’ দেশ ও জাতির কল্যাণে আছি এবং ভবিষ্যতেও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পাশেই থাকবো। এছাড়া আমি নিয়মিত তিন মাস পরপর রক্ত দান করি। আমি প্রতিনিয়ত দেশের মানুষের স্বার্থে একটি সুন্দর জীবন আর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার স্বপ্ন দেখি। আর রক্তের কোন‌ অভাব থাকবে না বাংলাদেশে। সবাই রক্তদানে উৎসাহিত হবেন। আমি ‘মানবিক পুলিশ মানিক’ সর্বদা সব সময়ই মানুষের পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত। এই আশা ব্যক্ত করে ‘মানবিক পুলিশ মানিক’ দেশের মানুষের কাছে ভালোবাসা ও দোয়া চেয়েছেন।

এসময় চাঁদপুর শহরের দুইটি সামাজিক সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী ও উনার শুভাকাঙ্ক্ষীগণরা সহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরাও উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

Back to top button