ডেক্স রিপোর্টঃ
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আরও শপথ নিয়েছেন ১৩ উপদেষ্টা।বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাত সোয়া ৯টার পর বঙ্গভবনে তাদের শপথ বাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তবে ঢাকার বাইরে থাকায় শপথ অনুষ্ঠানে ছিলেন না ১৬ সদস্যের বাকি তিনি উপদেষ্টা।
শপথের পর বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে একটা ল অ্যান্ড অর্ডার সিচুয়েশন তৈরি হয়েছে দেশে এবং এটাই স্বাভাবিক। কারণ ১৫ বা ১৭ বছর একটা স্বৈরাচারী শাসন ছিল। একটা অন্ধকার যুগ ছিল, মানুষের মনে অনেক যন্ত্রণা জমে ছিল। সেটা আউট পাস হয়েছে। কিন্তু তারপরও সেটা অতিরিক্ত পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। যেটা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য না।’
তিনি আরও বলেন, আমরা অনেক পুলিশ সদস্য, অনেক সংখ্যালঘু মানুষের আর্তনাদ শুনেছি। অনেক স্টোরি আছে যা আমি নিজে শুনেছি। এটা কোনোভাবে প্রত্যাশিত না। আমাদের ক্রোধ সংবরণ করতে হবে। আইনগতভাবে যারা দোষী আছে তাদের শাস্তি দেয়ার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চ্যালেঞ্জটা অনেক বড় উল্লেখ করে এই উপদেষ্টা বলেন, যে পশুশক্তির বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছি, আমরা যেন সেই শক্তির মতো হয়ে না যাই। তাহলে ছাত্র-জনতা যে অভাবনীয় একটা সুযোগ আমাদের জন্য নিয়ে এসেছে সেটার অর্জন ও মাহাত্ম্য ম্লান হয়ে যাবে। সেটা সবাইকে মনে রাখতে হবে।ইতিহাস গড়লেন আসিফ মাহমুদ ও নাহিদ ইসলাম।
উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, সবার সম্মতিতে এমন একটা সরকার গঠন করতে পেরেছি, যেটি সারাদেশে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। এই সরকারকে যিনি লিড দেবেন তিনি বাংলাদেশের সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার নেতৃত্বে এ সরকার বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়তে পারবে। ছাত্রদের প্রতি আমাদের যে কমিটমেন্ট ছিল, জনগণের প্রতি আমাদের যে কমিটমেন্ট ছিল, সেগুলোকে সংবিধানে সংযুক্তির মাধ্যমে আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব। এই প্রত্যাশা রাখছি।
চ্যালেঞ্জের বিষয়ে এই উপদেষ্টা বলেন, পুরো পৃথিবীতে তরুণ প্রজন্মের যে জাগরণ হয়েছে সেটা আমরা দেখেছি। বিভিন্ন দেশে ২৭ বছর বয়সেও প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। আমরা চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত আছি। আমি মনে করি আমাদের যে চ্যালেঞ্জ রয়েছে তা কর্মস্পৃহা দিয়ে মোকাবিলা করব। স্বৈরাচার সরকারকে কেউ হটাতে পারেনি। এত বড় বড় রাজনৈতিক দল ব্যর্থ হয়েছে। আমরা একদফা ঘোষণার মাত্র চার দিনের মাথায় স্বৈরাচারী সরকারের পতন নিশ্চিত করতে পেরেছি। এই কর্মস্পৃহা, এই দেশপ্রেম দিয়ে আমরা কেবিনেটে আছি। আমরা আমাদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারব।
চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, দেশের সংকটময় মুহূর্তে কাউকে না কাউকে তো দায়িত্ব নিতে হবে। কাজটা যদি সততার সঙ্গে জনগণকে সাথে নিয়ে করা যায়, সেই কাজটি তো কঠিন কোনো বিষয় নয়। বিশ্বের অনেক দেশ গণতান্ত্রিক হয়েছে, অনেক দেশে জবাবদিহিতামূলক শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশ তো মানবাধিকারকে সমুন্নত রেখেছে। তাহলে আমার দেশে কেন পারা যাবে না? আমরা শুরু করেছি, দেখা যাক কোনদিকে যাই।
তরুণদের বিষয়ে তিনি বলেন, দেশের জনসংখ্যা ৫০ ভাগই তরুণ, কিন্তু এই তরুণদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ছিল না বললেই চলে। তবে আমরা রাষ্ট্র পরিচালনায় এই তরুণ প্রজন্মকে সামনে নিয়েই কার্যক্রম পরিচালনা করবো।
উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, এখনও আমরা সবাই এক সঙ্গে বসতে পারিনি। পরবর্তীতে বসে সব বিষয় ঠিক করা হবে। সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা কাজ করতে চাই। আগে এই সরকারকে ছাত্র-ছাত্রীদের যে দাবি ছিল তা পূরণ করতে হবে। ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যারা নেমেছিল তারা একেবারেই সাধারণ মানুষ। সবার দাবির প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। সব মিলিয়ে আমাদের অনেক দায়বদ্ধতা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে আমাদের সাধারণ জনগণ যে কষ্ট পাচ্ছে, সে দিকগুলো নিয়েও গুরুত্ব সহকারে কাজ করতে হবে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের ১৬ উপদেষ্টা হলেন।
১. সালেহ উদ্দিন আহমেদ
২. ড. আসিফ নজরুল
৩. আদিলুর রহমান খান
৪. হাসান আরিফ
৫. তৌহিদ হোসেন
৬. সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
৭. মো. নাহিদ ইসলাম
৮. আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া
৯. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন,
১০. সুপ্রদিপ চাকমা
১১. ফরিদা আখতার
১২. বিধান রঞ্জন রায়
১৩. আ.ফ.ম খালিদ হোসেন
১৪. নুরজাহান বেগম
১৫. শারমিন মুরশিদ
১৬. ফারুকী আযম
এদের মধ্যে ফারুকী আযম বিধান রঞ্জন রায় ও সুপ্রদিপ চাকমা ঢাকার বাইরে থাকায় শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি বলে জানিয়েছেন।