দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপিহীন নির্বাচনী মাটে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের হাতে নির্বাচনি মাঠ
কামরুল ইসলাম চট্টগ্রামঃ
বিএনপিবিহীন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের ঘিরে গরম হয়ে উঠছে ভোটের মাঠ। মনোনয়নপত্র দাখিলের পর থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের ঘিরে বিভিন্ন স্থানে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। তবে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের প্রথমদিনে হেভিওয়েট বিদ্রোহীদের মনোনয়ন বাতিলে কিছুটা টেনশনমুক্ত হচ্ছেন নৌকা প্রার্থীরা।
এদিকে, নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর আগেই ভোটের মাঠে নেমে পড়েছেন আওয়ামী লীগ ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। নিজ দলীয় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে নির্বাচনী সভা শুরু করেছেন। বিধি লঙ্ঘনের দায়ে একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থীকে তলব করেছে নির্বাচন কমিশন। চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে চার আসনে নির্ভার রয়েছেন আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীরা। দুটিতে আওয়ামী লীগ জোটের শরিকদের ছাড় দেওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা। বাকি ১২টি আসনে নিজ দলের হেভিওয়েট বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। এদিকে, গতকাল থেকে মনোনয়পত্র বাছাই শুরু হয়েছে। প্রথম দিনে অন্তত ৫ হেভিওয়েট প্রার্থীর মনোয়নপত্র বাতিল করা হয়। এরমধ্যে কয়েকজন প্রার্থিতা বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে জানান। আর বাকি আট আসনে আজ মনোনয়নপত্র বাছাই করা হবে।
১৬ আসনের মধ্যে চারটি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা নির্ভার রয়েছেন। তারা হলেন, চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনের দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী। চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
গতকাল চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে নৌকার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিনের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং অফিসার। গিয়াস উদ্দিনের প্রার্থিতা বাতিলে টেনশনমুক্ত হলেন নৌকা প্রার্থী মাহবুব উর রহমান রুহেল। রুহেল আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ছেলে। তবে রিটার্নিং অফিসারের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে জানান গিয়াস উদ্দিন।
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার সনি উভয় সংকটে রয়েছেন। আসনটিতে বর্তমানে আছেন ১৪ দলীয় জোটের শরিক তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভা-ারী। এবারও আসনটি শরিক দলকে ছাড় দেওয়ার গুঞ্জন রয়েছে। এছাড়াও রয়েছেন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হোসাইন মো. আবু তৈয়ব। এছাড়াও আওয়ামী লীগঘেঁষা বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির শাহাজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভা-ারীও আছেন এ আসনে। জোটের কারণে একইভাবে শঙ্কায় রয়েছেন হাটহাজারী আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম। ২০০৮ সাল থেকে আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ।
চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহবুব উর রহমান রুহেল ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. গিয়াস উদ্দিনকে নিয়ে উত্তাপ ছিল ভোটের মাঠে। গতকাল গিয়াসের মনোনয়ন বাতিল করেন রিটার্নিং অফিসার। এখন অনেকটা খোশমেজাজে রয়েছেন রুহেল। এছাড়াও জোটের হেভিওয়েট প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী দিলীপ বড়–য়া নীবর অবস্থায় রয়েছেন।
চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহফুজুর রহমান মিতা ও স্বাচিপের কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী ভোটের মাঠে রয়েছেন। চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকু-) আসনে এখন নির্ভার হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আল মামুন। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বড় চ্যালেঞ্জ ছিল দুই হেভিওয়েট প্রার্থী। বর্তমান সংসদ সদস্য দিদারুল আলম ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য লায়ন মোহাম্মদ ইমরানের মনোনয়নপত্র বাতিলের কারণে খোশমেজাজে রয়েছেন মামুন।
চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ, বায়েজিদ আংশিক) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী নোমান আল মাহমুদ টেনশনমুক্ত হচ্ছেন। দলের হেভিওয়েট প্রার্থী নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, সাবেক কাউন্সিলর বিজয় কুমার চৌধুরী, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আরশেদুল আলম বাচ্চুর মনোনয়ন বাতিল করা হয়। চট্টগ্রাম-১০ (খুলশী, পাহাড়তলী, হালিশহর) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু সাবেক মেয়র মনজুর আলম, নগর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদকে নিয়ে টেনশনে রয়েছেন।
চট্টগ্রাম-১১ (পতেঙ্গা-বন্দর) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ প্রার্থী এম এ লতিফ ও কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমনকে ঘিরে উত্তাপ ছড়াচ্ছে ভোটের মাঠে। নগর ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ দুই প্রার্থীকে ঘিরে দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়েছে। চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী ছাড়াও বর্তমান সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীকে ঘিরে ভোটের আগেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভোটের মাঠ। দুই পক্ষই মাঠে নেমে পড়েছেন।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আট জন। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মো. নজরুল ইসলামী চৌধুরীর সঙ্গে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরী। চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেবের মধ্যে ইতিমধ্যেই বিষোদগার শুরু হয়েছে।
চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান ও আ. লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির লিটনকে ঘিরে টেনশনে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী।