হাইমচর প্রতিনিধিঃ
চাঁদপুরের হাইমচরে বহু আলোচিত ভাড়াটিয়া লোকদের মাধ্যমে আপন ছেলে মোঃ আরিফ হোসেন (২৫) কে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মা খুকি বেগম (৪৩) ও মায়ের পরকীয়া প্রেমকি মোঃ জয়নাল গাজী (২৪) কে মৃত্যুদন্ড (ফাঁসি) এবং সহযোগী দুই আসামী ইউছুফ মোল্লা (২৭) ও মাহবুব মোল্লা (২৬) কে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। একই সাথে প্রত্যেক আসামীকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদন্ড দেয়া হয়।
বুধবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (১) ফারহানা ইয়াসমিন এই রায় দেন। হত্যার শিকার আরিফ হোসেন চাঁদপুর জেলার হাইমচর উপজেলার দক্ষিণ আলগী ইউনিয়নের মৃত্যু মাছুম খান বাড়ির মিজানুর রহমান খানের ছেলে এবং মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত খুকি বেগমের ছেলে।
অপর মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী মোঃ জয়নাল গাজী পাশবর্তী ফরিদগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম লাড়ুয়া গ্রামের গাজী বাড়ির গণি গাজীর ছেলে। যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্তরা হলেন- ফরিদগঞ্জ উপজেলার উত্তর বিষকাটালি গ্রামের মোল্লা বাড়ির হোসেন মোল্লার ছেলে ইউছুফ মোল্লা ও একই গ্রামের বিল্লাল মোল্লার ছেলে মাহবুব মোল্লা।
মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, হত্যার শিকার আরিফ হোসেন তার মা খুকি বেগমের সাথে আসামী জয়নাল গাজীর পরকীয়া সম্পর্কের কথা জানতেন। এই বিষয়ে মা ছেলের সম্পর্কের অবনতি হয়। ২০১৫ সালের শুরুতে ছেলে আরিফ হোসেন প্রেমের সম্পর্ক করে পাশবর্তী উত্তর আলগী ইউনিয়নের মিজি বাড়ির আব্দুস সালাম মিজির মেয়ে আসমা আক্তার (১৯) কে বিয়ে করেন। তাদের বিয়ে মা খুকি বেগম প্রথমে মেনে না নিলেও এক পর্যায়ে মেনে নেন।
এরপর মা, ছেলে ও ছেলের বউ এর সাথে বিভিন্ন বিষয়ে জগড়া বিবাদ হত। এরই মধ্যে মা খুকি বেগম ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা করে। তারই আলোকে ২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর ছেলের বউ আসমাকে পিত্রালয়ে পাঠিয়ে দেন। এরপর ১৮ নভেম্বর পরিকল্পিতভাবে মা খুকি বেগম নিজ গৃহে পরকীয়া প্রেমিক জয়নাল গাজী ও সহযোগীদের দিয়ে আরিফকে ঘুমন্ত অবস্থায় হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে, দা দিয়ে কুপিয়ে এবং ব্লেড দিয়ে পোচ মেরে মৃত্যু হয়েছে মনে করে ঘরের মেঝেতে ফেলে চলে যায়।
পরদিন ১৯ নভেম্বর সকালে খুকি বেগম আরিফের স্ত্রী আসমাকে ফোন করে জানায় ডাকাতরা আরিফকে জখম করে ফেলে গিয়েছে। আসমা তাৎক্ষণিক স্বামীর বাড়িতে চলে আসে এবং আরিফকে উদ্ধার করে প্রথমে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল (সদর) হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখান থেকে ঢাকা নেয়ার পথে মতলব ফেরিঘাটে পার হওয়ার পর সকাল ৯টার দিকে আরিফের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ওইদিনই আসমা তার শ্বাশুড়ী খুকি বেগমসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করে হাইমচর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে।
এই মামলাটি তদন্ত করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয় হাইমচর থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ নুর মিয়াকে। তিনি মামলাটি দীর্ঘ এক বছর তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ৯ নভেম্বর আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন।
মামলার সরকার পক্ষের আইনজীবী সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) বদিউজ্জামান কিরন জানান, এটি একটি নৃশংস হত্যাকান্ড। মায়ের পরকীয়ার জন্য এই ঘটনা ঘটে। মামলাটি দীর্ঘ ৭ বছরের অধিক সময় চলাকালীন সময়ে আদালত ২০জনের স্বাক্ষ্যগ্রহণ করেন। স্বাক্ষ্যগ্রহণ ও মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করে আসামীদের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় এই রায় দেন। আসামীদের মধ্যে ইউছুফ মোল্লা প্রথম থেকে পলাতক। বাকীরা জামিনে থাকলেও রায়ের সময়ে সকল আসামীর অনুপস্থিতিতে রায় হয়। আসামী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন মোঃ জয়নাল আবেদীন।