কামরুল ইসলামঃ
মেহেরপুর-কুষ্টিয়া মহাসড়কের গাংনী বাজারে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হয়নি, সওজের যায়গা ফেলে রেখে জেলা পরিষদের যায়গা দখলে মরিয়া মেহেরপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, উপ—বিভাগীয় প্রকৌশলী, উপসহকারি প্রকৌশলীর কোটি টাকার বাণিজ্যর কারণে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া মহাসড়কের গাংনী বাজারে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হয়নি। এদিকে সড়ক ও জনপথের প্রচুর জায়গা ফেলে রেখে জেলা পরিষদের জায়গা দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে নির্বাহী প্রকৌশলী খোন্দকার গোলাম মোস্তফা ও উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) মিজানুর রহমান। এনিয়ে শুরু হয়েছে আইনী জটিলতা। জেলা পরিষদের জায়গা দখলে নিতেই মেহেরপুর—কুষ্টিয়া সড়কের গাংনী বাজারের কাজ দীর্ঘদিন বন্ধ রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রায় সাড়ে ৬ শ কোটি টাকা ব্যায়ে ফোরলেনসহ নির্মাণ কাজ চলছে মেহেরপুর—কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক। সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ এই সড়ক নির্মাণকে কেন্দ্র করে মেহেরপুর—কুষ্টিয়া সড়কের উভয় পাশে (খলিশাকুন্ডি পর্যন্ত) বিভিন্ন স্থানের ৬/৭ টি মসজিদ, একটি কবরসহ সহস্রাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করলেও অজ্ঞাত কারণে গাংনী পৌর শহরে অবস্থিত সওজের নিজস্ব যায়গার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেনি। গাংনী উপজেলার কাথুলি মোড় এলাকা থেকে রাজা ক্লিনিক পর্যন্ত মেহেরপুর—কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের উভয় পার্শ্বের জায়গা দখল করে অর্ধশতাধিক দোকানঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সড়ক ও জনপথের (সওজ) জায়গা দখল করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা এসব দোকান ঘর বানিয়েছেন। মোটা অঙ্কের টাকা অগ্রিম নিয়ে দোকানঘরগুলো ভাড়া দেওয়া হয়েছে ব্যবসায়ীদের কাছে। সওজের জায়গার উপর মার্কেট বানিয়ে প্রভাবশালী মহল প্রতিমাসে আয় করছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। জানা গেছে, ২০২২ সাল থেকে প্রায় সাড়ে ৬ শ কোটি টাকা ব্যায়ে শুরু হয়েছে মেহেরপুর—কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের ফোরলেনসহ সম্প্রসারণের কাজ। গাংনী উপজেলা শহরের বড়বাজার এলাকায় সড়কের জায়গা দখল করে অর্ধশতাধিক দোকানঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সড়ক ও জনপথের (সওজ) জায়গা দখল করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা এসব দোকানঘর বানিয়েছেন। মোটা অঙ্কের টাকা অগ্রিম নিয়ে দোকানঘরগুলো ভাড়া দেওয়া হয়েছে। আমরা ভাড়া দিয়ে দোকান পাট পরিচালনা করছি। তারা বলেন, প্রায় ৫৫ বছর যাবৎ সওজের জমি জবরদখল করে মার্কেট নির্মাণ করেছে প্রভাবশালীরা। স্থানীয়রা জানান, শুরুতে এসব দোকানপাট টিনশেড দিয়ে তৈরী করলেও পর্যায়ক্রমে সেখানে দোতালা তিন তলা ও চারতলা পর্যন্ত ভবন ও মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। এর বাইরেও এই অঞ্চলিক মহাসড়কটির আশপাশে শতাধিক দোকানঘর বানানো হয়েছে সওজের জমিতে। অথচ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেনি। বার বার গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েও তারা অজ্ঞাত কারনে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেনি।জানা গেছে, সর্বশেষ গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে ২০২৩ সালের ১ মার্চ থেকে ৪ মার্চ সওজ খুলনা জোনের এস্টেট কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অনিন্দিতা রায় এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেন। যেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা, কবর, ঈদগাহ ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করা হয়েছে। কিন্তু সেই অভিযানে গাংনী উপজেলা শহরে রয়ে গেছে প্রভাবশালীদের বড় বড় শপিং মলসহ মার্কেট। উদ্ধার হয়নি সরকারের কোটি কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ।
অভিযোগ উঠেছে, সওজের স্থানীয় নির্বাহী প্রকৌশলী খোন্দকার গোলাম মোস্তফা, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডি) মিজানুর রহমান ও উপসহকারি প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের কয়েক কোটি টাকা ঘুঁষ বাণিজ্যের কারণে এগুলো উচ্ছেদ করার কোনো তথ্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নজরে আনেননি। সরেজমিনে দেখা গেছে, কাথুলি মোড় থেকে গাংনী রাজা ক্লিনিকের সামনে কুষ্টিয়ার দিকের রাস্তার উভয় পাশে সওজের অন্তত শতাধিক দোকান ও মার্কেট গড়ে উঠেছে। এখানে খাবারের কয়েকটি হোটেলও আছে। দোকানগুলোর বিষয়ে কারো সঙ্গে কথা বলতে ‘নিষেধ’ করেছেন বলে জানিয়েছেন একাধিক ব্যবসায়ী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যবসায়ী জানান, পাঁচ লাখ টাকা অগ্রিম ও মাসিক ১০ হাজার টাকা ভাড়ায় দোকানটি ভাড়া নিয়েছেন তিনি। এখানে প্রতিটি দোকানের ভাড়া ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। প্রতিটি দোকান বাবদ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অগ্রিম নেওয়া হয়েছে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত। বাজারে অন্তত ১০ জন ব্যবসায়ী ও স্থানীয় এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একের পর এক অবৈধ দখলের কারণে বাজারজুড়ে তৈরি হয়েছে বিশৃঙ্খলা। এসব কারণে গাংনী বাজার এলাকায় প্রায় সময়ই যানজট লেগে থাকে। ঘটে ছোট বড় দুর্ঘটনা।
জানা গেছে, ১৯৬৪ সালের ৩ আগষ্ট থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত গাংনী উপজেলা শহরে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সরকার) জমি অধিগ্রহণ করে। দেখা গেছে, ২২১৭ সিএস/ এসএ দাগে শফি মন্ডল, শুকুর মোহাম্মদ ও নুর মোহাম্মদের কাছ থেকে ১৮৮৪ রুপি ৮ শতক, সিএস ২২০৮ দাগে পাতানের কাছ ৬ শতক জমি ১২৪ রুপিতে, ২২০৬ নং দাগে তাশের আলী, তাঁরা চাঁদ মন্ডল, ফাঁকের চাঁদ মন্ডল ও ছেতাব আলী মন্ডলের কাছ থেকে ৭ শতক জমি ১৩৫ রুপি, ২১৪১ দাগে ১২ শতক ও ২১৪২ দাগে ৪ শতক জমি সদর শাহ ও নিলু শাহর কাছ থেকে ৫৯৪ রুপি, শামসুদ্দিন আহমেদ, একেএম সিদ্দিক হাসান সরোয়ারের কাছ থেকে ২১৪৩ দাগে ১৬ শতক, ২১৪৪ দাগে ৬ শতক, ২১৪৬ দাগে ৪ শতক, ২১৪৮ দাগে ৫ শতক, ২১৪২ দাগে ৩ শতক জমি ৪৯৫০ রুপিতে, দাগ নং ২১৪৩ এ ৫ শতক, ২১৫০ দাগে ৩ শতক, ২১৫০ এসএ রেকর্ড ১৬ শতক জমি সবদেল মন্ডলের কাছ থেকে ৫০৬ রুপি, দাগ নং ২১৫৫ এ ৭ শতক জমি ইকরাম হোসেনের কাছ থেকে এসএ রেকর্ড ২১৫৬ এ ১৪ শতক জমি শহিদের কাছ থেকে ১০৪৭ রুপিতে, ২১৫৭ দাগে দোয়াত আলীর কাছ থেকে ১৩ শতক জমি ১০৪৭.৮৪ রুপিতে, ২০৯৫ দাগে ৫ শতক জমি ইউনুস আলী, ইদ্রিস আলী ও রাজ্জাক আলীর কাছ থেকে ৩৩৩ রুপিতে ও দাগ নং ২০৯৪ এ ১ শতক জমি জহির উদ্দিনের কাছ থেকে ৩৫ রুপিতে অধিগ্রহণ করে সরকার। দেখা গেছে, সড়কের উপর রয়েছে সদ্য প্রয়াত আব্দুর রহমানের তিনতলা মার্কেট ও বাড়ি, আবু তালেব ও তার পরিবারের সদস্যদের টিনশেড, রফিকের এসবি কাউন্টার রয়েছে। এসব বাড়ি ও মার্কেটের পেছনেও রয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধিগ্রহণকৃত জমি। তবে, আব্দুর রহমানের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সওজের সাথে আদালতে তাদের মামলা রয়েছে।
সওজ মেহেরপুর নির্বাহী প্রকৌশলী খোন্দকার গোলাম মোস্তফা বলেন, মেহেরপুর—কুষ্টিয়া আঞ্চলিক‘মহাসড়কের গাংনী বাজার ও আশপাশের অংশে যেসব অবৈধ স্থাপনা আছে সবই আমাদের অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তিতে। আমরা এর আগেও একাধিকবার সম্পত্তি উদ্ধার করেছি। বর্তমানে ওইখানে ফোরলেন রাস্তার কাজ চলছে। যত দ্রুত সম্ভব আমাদের সব সম্পত্তি থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে। এ ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রীতম সাহা বলেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়টি সওজের।