নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
তিনি রাজশাহীর মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক। ১৮ বছর ধরে একই জায়গায় করছেন সরকারি চাকুরী। তার ক্ষমতার দাপটে তটস্থ থাকেন শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা। কোন কোন সময় অভিভাবকরাও তার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েন। তার নাম সাইফুল ইসলাম। তিনি ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের সিনিয়র শিক্ষক।
বর্তমানে তার বিরুদ্ধে নিয়ম বর্হিভূতভাবে লাখ টাকার বিনিময়ে সপ্তম শ্রেণীতে শিক্ষার্থী ভর্তি,পাঠদানে ফাঁকি, স্কুলের জমি/পুকুর টেন্ডার বানিজ্য, শিক্ষার্থীদের সাথে অশালীন আচরণ, অকারণে শিক্ষার্থীদের সাসপেন্ড ও টিসি দেওয়া,সরকারি টাকা আত্মসাত, উর্ধতন কর্মকর্তার নামে শিক্ষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে অন্যত্র বদলীর হুমকি, পরীক্ষায় ফেল দেখিয়ে মিউচুয়াল ট্রান্সফার বানিজ্যসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তার এহেন কর্মকান্ডের কারণে পুরো উপজেলায় চলছে আলোচনা সমালোচনার ঝড়। সেই অভিযুক্ত শিক্ষকের কারণে শিক্ষার্থী অভিভাবকরা আছেন দুশ্চিন্তায়।
শিক্ষক সাইফুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ,
২০২৪ শিক্ষাবর্ষে মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে লটারির মাধ্যমে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ১২০ জন, ৮ম শ্রেণীতে ২৫ জন ও ৯ম শ্রেণীতে ১০ জন ভর্তির জন্য আগ্রহীদের নিকট থেকে অনলাইনে আবেদন আহবান করা হয়। যার বিজ্ঞপ্তি নং- মসউবি/ভর্তি-০১/২০২৩। ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে ৭ম শ্রেণীতে ভর্তির জন্য কোন সুযোগ অনলাইন বা সরাসরি না থাকলেও অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইফুল ইসলাম সেই অসাধ্যকে সাধন করেছেন। তিনি স্কুলের সফটওয়্যারে ইউজার আইডি, পাসওয়ার্ড তৈরী করে সপ্তম শ্রেণীতে সিট খালি দেখিয়ে সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ভর্তি কমিটির সভাপতি মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়শা সিদ্দিকাকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে তিন শিক্ষার্থী অভিভাবকের নিকট থেকে ৯০ হাজার টাকা নিয়ে ৭ম শ্রেণীতে ভর্তি করেন। ২০২৪ সালে টাকার বিনিময়ে সপ্তম শ্রেনীতে ভর্তি শিক্ষার্থীরা হলেন, সপ্তম ক শাখা ওয়াহিদ তাওসিফ নেহাল, (আইডি নং-১১৩৪), খ শাখা তানভিরুল শাহ্ তানভীর (আইডি নং-২১৩৩), আইডি নং-২১৩৫)। এছাড়াও অন্যান্য শ্রেনীতে ওয়েটিং সিরিয়াল থেকে টাকার বিনিময়ে ভর্তি বানিজ্যের অভিযোগ রয়েছে শিক্ষক সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে। তার এহেন কর্মকান্ডের কারণে এ স্কুলের শিক্ষা ব্যবস্থা আজ হুমকির মুখে। তার ক্ষমতা এতই যে এখানে কর্মরত শিক্ষকরা তার অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গেলে তিনি তাদের বিভিন্নভাবে নাজেহাল করেন। তার কারণে স্বনামধন্য শিক্ষকরা এ স্কুল ছাড়তে বাধ্য হন এমন অনেক নজির রয়েছে। শিক্ষক সাইফুলের টাকার প্রতি এতই লোভ যে তিনি তার স্কুলের গরীব অসহায় শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে অন্যান্য শিক্ষকদের ভয় দেখিয়ে কয়েকটি বিষয়ে কিছু শিক্ষার্থীদের ক্লাশ পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেন এবং শিক্ষার্থী অভিভাবককে ভুলভাল বুঝিয়ে স্কুল ছাড়তে বাধ্য করেন। এসব শিক্ষার্থীরা অন্য স্কুলে ভর্তি হলে সেই স্থানে বাইরের শিক্ষার্থী অভিভাবকের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মিউচুয়াল ট্রান্সফার নাটক সাজিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির অভিযোগও রয়েছে শিক্ষক খ্যাত কসাই সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
তিনি ২০০৬ সালে শিক্ষক হিসেবে মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। দীর্ঘ আঠারো বছর একই উপজেলায় শিক্ষকতা করার কারণে তিনি নিজেকে অঘোষিত প্রধান শিক্ষক হিসেবে জাহির করেন। তিনি এতই শক্তিশালী ধুরন্দর একজন শিক্ষক যিনি সব সময় থাকেন ধরা ছোয়ার বাইরে। বিদ্যালয়ে তার কথায় শেষ কথা। তার কথার বাইরে একচুলও নড়তে পারেনা শিক্ষকসহ শিক্ষার্থীরা। যার কারণে ওই স্কুলে শিক্ষার পরিবেশ দিন দিন নিম্ন কোটায় নামতে শুরু করেছে। শিক্ষক সাইফুলের আচরণ, বাচনভঙ্গি মাস্তান টাইপের হওয়ায় তিনি উপজেলায়
লুলা সাইফুল নামেও পরিচিত।
মোঃ সাইফুল ইসলাম ২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি মোহনপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। সেখানে ২ মাস ১৫ দিনের মাথায় একই সালের ২১ মার্চ অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সাথে অশালীন কথাবার্তা ও কুরুচিপূর্ণ ঈঙ্গিত দেওয়ার অভিযোগে তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করেন ততকালীন ইউএনও ও বর্তমান রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহম্মেদ। এরপরেও থেমে নেই শিক্ষক নামের এই কুলাঙ্গার সাইফুল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অত্র বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, তিনি ছাত্রীদের দৈহিক আকার, পোশাক পিরিয়ড ও টয়লেট ব্যবহার সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, একজন শিক্ষকের থেকে এধরনের কথাবার্তা শিক্ষার্থীদের কাছে লজ্জাজনক ও বির্বতকর। তারা চান দ্রুত এ স্কুল থেকে তাকে অন্যত্র বদলী করা হোক।
এবিষয়ে অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকদের সাথে কথা বলে ভর্তি বানিজ্যসহ অন্যান্য অনিয়ম ও আার্থিক দূর্নিতির চিত্র উঠে আসে যা উর্ধতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অষ্টম ও নবম শ্রেণির কয়েকজন অভিভাবক বলেন, শিক্ষক হলো জাতির কারিগর। একজন শিক্ষক যদি স্কুলে পড়ানোর পরিবর্তে অনিয়ম, দূর্ণিতি, আর খবরদারির ছড়ি ঘোরায় তাহলে শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষকের থেকে কি শিখবে? তার বিরুদ্ধে আমাদের ছেলে মেয়েরা যেসব কথা বার্তা বলে তা খুবই দুঃখজনক। তার কারনে এ স্কুলে স্বনামধন্য শিক্ষকরা থাকতে পারেনা। দ্রুত তার বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ওই শিক্ষককের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছেন অভিভাবকরা।
এবিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক সাইফুল ইসলাম মুঠো ফোনে জানান, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলি সত্য নয়। তবে নিউজটি না করলে ভাল হয়। সাক্ষাতে দেখা করতে পারলে ভাল হত।
এবিষয়ে মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুজিত কুমার দেবনাথ মুঠোফোনে জানান, মাত্র কিছুদিন হল এখানে যোগদান করেছি সব বিষয় আমার জানা নেই। শিক্ষক সাইফুলের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি আমি শুনেছি।
এবিষয়ে মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ভর্তি কমিটির সভাপতি আয়শা সিদ্দিকা জানান, শিক্ষক সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে মৌখিকভাবে অনেক অভিযোগ আমার কাছে আসছে। লিখিত অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে তদন্