সালমা আক্তার দাউদকান্দি কুমিল্লাঃ
কুমিল্লার দাউদকান্দির কৃতি সন্তান অধ্যাপক মতিন সৈকত একজন বহুমুখী সৃজনশীল উদ্ভাবক-উদ্যোক্তা। সংগঠক, সাহিত্যিক, পরিবেশবিদ এবং নদীযোদ্ধা। মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দনসহ তিনবার জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত। পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবন ব্যাবহার ও সম্প্রসারণের জন্য ২০১০ এবং ২০১৭ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাকে দুইবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক এবং পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে ২০২১ সালে জাতীয় পরিবেশ পদক দিয়ে সন্মানিত করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মতিন সৈকত-কে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক প্রদানের সময়ে বলেন। “তোমার সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের জন্য অভিনন্দন জানাই। আমাদের দেশের সবকটি নদী পূনঃখনন প্রয়োজন।২০২১ সালে কৃষি মন্ত্রণালয় মতিন সৈকত-কে কৃষিতে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি এগ্রিকালচারাল ইম্পরট্যান্ট পার্সন এআইপি’র জন্য সুপারিশ করেন। মতিন সৈকত পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের Bangabandhu Award For Wildlife Conservation-2024 জন্য প্যানেলভূক্ত।
১৯৮৭ সালে মতিন সৈকত মহামান্য রাষ্ট্রপতির চিঠি পেয়ে উজ্জীবিত হন।
তিন দশকের বেশি সময় ধরে কৃষি পরিবেশ সামাজিক উন্নয়নে মতিন সৈকত দৃষ্টান্ত স্হাপন করেন। বিষমুক্ত ফসল নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন, খাল-নদী পূনঃখনন আন্দোলন, জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পাখি উদ্ধার ও অবমুক্ত করণ, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, প্লাবন ভূমিতে সমবায় ভিত্তিক মাছ চাষ সম্প্রসারণে উদাহরণ সৃষ্টি করেন। প্লাবন ভূমিতে দাউদকান্দি মডেল এবং নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে দাউদকান্দি মডেলের অন্যতম উদোক্তা মতিন সৈকত। তিনি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গণশেয়ারের মাধ্যমে ২০০১ সালে আপুসি, ২০০২ সালে বিসমিল্লাহ এবং ২০১৮ সালে আপুবি মৎস্য প্রকল্পের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। তার দীর্ঘ আন্দোলনের ফলে সরকার কালাডুমুর নদী পূনঃখনন করে দিয়েছেন। খিরাই নদী, মাইথারকান্দি খাল, সুন্দলপুর খাল, টামটা-বিটমান খাল পূনঃখননের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। সরকার সারাদেশে ১০টি আইপিএম মডেল ইউনিয়ন বাস্তবায়ন করেন। তার মধ্যে মতিন সৈকতের ইলিয়টগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়ন একটি। বোরোধান উৎপাদনে সেচের পানির জন্য কৃষক ১০০০-থেকে ২০০০টাকা বিঘাপ্রতি খরচ দিতে হয়। সেখানে মতিন সৈকত ৩০ বছর যাবত মাত্র দুইশ টাকার বিনিময়ে বোরোধান উৎপাদনে মৌসুমব্যাপী সেচ সুবিধা প্রদান করেছেন।
দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজর (অবঃ) মোহাম্মদ আলী সুমন উল্লেখ করেন। “মতিন সৈকত কৃষি ও পরিবেশ উন্নয়নে ত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে দেশব্যাপী দৃষ্টান্ত স্হাপন করেছেন। বিষমুক্ত ফসল, নিরাপদ খাদ্য আন্দোলন, খাল-নদী পূনঃখনন, বন্য প্রাণীসহ পাখি উদ্ধার ও অবমুক্ত, জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণের পাশাপাশি বহুমুখী সামাজিক আন্দোলন করে যাচ্ছেন। মহাসড়কের দুই পাশের ময়লা আবর্জনা, শহর- নগরের বর্জ্যকে রুপান্তরিত করে সিটিজেন ফার্টিলাইজার বা নাগরিক সার তৈরি কারার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানিয়ে আসছেন। কালাডুমুর নদী পূনঃখনন মতিন সৈকতের আন্দোলনের ফসল। কৃষি, পরিবেশ, সামাজিক উন্নয়নে নিবেদিত মতিন সৈকত।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজার
ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ অধ্যাপক মতিন সৈকতের ব্যাপারে বলেন” মতিন সৈকত ত্রিশ বছর যাবত পরিবেশ নিয়ে কাজ করছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের এই সময়ে কাজটি খুবই চ্যালেন্জিং। নিঃস্বার্থভাবে তিনি এ কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও পাখি উদ্ধার ও অবমুক্ত করণে তাঁর ভূমিকা প্রশংসনীয়। আমি এ ক্ষেত্রে তাঁর সফলতা কামনা করি।
সি,সি,এন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ড. আলী হোসেন চৌধুরী বলেন “মাটির গন্ধ মেখে আছে যার শরীরে। মনের মধ্যে জেগে থাকে গ্রাম আর গ্রামের মানুষ। পরিবেশ আর কৃষির উন্নয়ন যার পেশা তিনি মতিন সৈকত। দীর্ঘ দুই দশক ধরে কৃষি ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করে চলছেন তা অন্যকে প্রণোদিত করছে। তিনি এক ব্যতিক্রমী উজ্জন মানুষ।’
ভারতের পশ্চিম বঙ্গের বিশিষ্ট সমাজ বিশ্লেষক, প্রযুক্তিবিদ অশোক কুমার সিনহা বলেন ‘মতিন সৈকত খুব ভালো কাজে জীবনকে অর্থবহ রেখেছেন। চারিদিকের প্রাকৃতিক দূষণ, সামাজিক দূষণ , রাজনৈতিক দূষণের মধ্যেও তাঁর মত মানুষ’রা ভরসা। পৃথিবী মানুষের বাসযোগ্য থাকুক এর থেকে বড় চাওয়া আর কি থাকতে পারে। আর মানুষ তো একক নয়, আছে পরিবার, সমাজ, দেশ, প্রকৃতি, জীবজন্তু-পাখি, সমগ্র প্রাণী জগত। প্রত্যেকে ভালো থাকলেই সবাই ভালো থাকবে, আলাদাভাবে কারও ভালো থাকা সম্ভব নয়। মতিন সৈকতের নদী-খাল বাঁচানোর লড়াই পরিবেশ আন্দোলনের এক গৌরবজনক অধ্যায়। তাঁকে দেখে নদীমাতৃক দুই বাংলার মানুষ নদী-খাল বাঁচানোর লড়াইয়ে অনুপ্রাণিত হোক।
কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী স্বাক্ষরিত সার্টিফিকেটে উল্লেখ করেন ‘ এ দেশের গণ মানুষের অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর স্বপ্নের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রচেষ্টায় পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবন-এর মাধ্যমে কৃষি উন্নয়নে আপনি জনাব এম এ মতিন (মতিন সৈকত) এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্হাপন করেছেন। দেশ গড়ার অব্যাহত সংগ্রামে গৌরবময় ও কৃতিত্বপূর্ণ এ অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ আপনাকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কারে ভূষিত করা হলো।
পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এমপি , মন্ত্রী মোঃশাহাব উদ্দিন এমপি স্বাক্ষরিত সনদে উল্লেখ করা হয়। ” পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ জনাব এম, এ মতিন (মতিন সৈকত) সাং-আদমপুর , ডাকঘর-রায়পুর, উপজেলা-দাউদকান্দি, জেলা-কুমিল্লা কে জাতীয় পরিবেশ পদক ২০২১ প্রদান করা হলো। ভবিষ্যতে পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ জনাব এম, এ মতিন (মতিন সৈকত) আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন এই কামনা করি। ” কৃষি মন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক এমপি, পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি মহোদয় মতিন সৈকত-কে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিনন্দন জানান।