মোঃ আলাউদ্দিন মন্ডল রাজশাহীঃ
রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ বাংলাদেশের বিভিন্ন দেশীয় খাবার ও ফলমূল নিয়ে আড়ম্বড়পূর্ণভাবে উদযাপন করেছে দেশীয় খাবার ও ফল উৎসব-২০২৩’। বাংলাদেশের হরেক রকম দেশীয়
ফলমূল ও বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় খাবারের পসরা নিয়ে আয়োজিত হয়েছে এই উৎসব।
শনিবার (২২ জুলাই) সকাল ৯টা থেকে আরম্ভ হয়ে দিনব্যাপী চলে এই আয়োজন। বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মিলিয়ে মোট ৫০ টি স্টলে দেশীয় ফলমূল ও দেশীয় খাবারের প্রদর্শনী হয়।
উৎসব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল ও কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সম্মানিত সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মাজহারুল হক।
মেলার প্রবেশমুখে ডানদিক থেকে সারি সারি দেশীয় ফল ও দেশীয় খাবারের স্টল। দেশীয় ফলমূলের মধ্যে ছিল কাঁঠাল, প্রায় ২৩ প্রজাতির আম যেমন ফজলি, আর্শ্বিনা, বারি-৪, আম্রপালি, ল্যাংড়া, লক্ষণভোগ, কাটিমন,হিমসাগর, খিরসাপাতি, গোপালভোগ, রাণীপছন্দ, কলাবতী, দুধসর, কাচামিঠা, বারি-১১, কুমড়োজালি।
হাড়িভাঙ্গা, মোহনভোগ, মল্লিকা, সুবর্ণরেখা, কালীভোগ, মিশ্রিদানা, গোলাপখাস প্রভৃতি, জাম, খুদিজাম, করমচা,কদবেল, বেল, আমড়া, চালতা, কলা, পেয়ারা, কুল বা বোরই, ডালিম, জলপাই, বন কাঁঠাল, বাতাবী লেবু,জামরুল, তরমুজ, আনারস, আঁশফল, অরবরই, ডুমুর, ডেউয়া, কামরাঙ্গা, কাউফল, তাল, গাব, বেতের ফল।
লটকন, খেজুর, লিচু, প্ৰেজাম (পাহাড়ী ফল), ডাব, নারিকেল, বাঙ্গি, আমলকী, লুকলুকি, পানিফল, তেঁতুল,পেঁপে, আতা, শরিফা, চাপালিশ, আলুবোখারা, চীনাবাদাম, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, আখরোট, কফি বিন, স্ট্রবেরি, ড্রাগন সহ বিচিত্র রকমের ফল। এসকল দেশীয় ফলগুলো দেশব্যাপী অত্যন্ত সহজলভ্য এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর।
অপরদিকে ঐতিহ্যবাহী ও বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে খই, মোয়া, মুড়কি, বাতাসা, সন্দেশ, ঘোল,তিলের খাজা, কটকটি, খাগড়াই, হাড়ির রসগোল্লা, নারিকেলের লাড্ডু, চিড়াদই, তালের পিঠা, ছাতু, দুধের ছানা, চানাচুর, গজা, খাজা বা খাস্তা, মালাই, পাপড়, নিমকি, গুড়ের জিলাপি, গুড়ের ঝুরি, ছানার জিলাপি প্রভৃতি।
এসকল আকর্ষণীয় ও মজাদার খাবার যেমন বাংলাদেশের ঐতিহ্যের স্বাক্ষর বহন করে তেমনি দেশীয় উপকরণে প্রস্তুতকৃত এই খাবারগুলোতে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানের পরিমাণ নেই বললেই চলে। তবে আজকাল এসকল খাবারের স্থান দখল করে নিচ্ছে ফাস্টফুড ও রেস্টুরেন্টের বিভিন্ন খাবার যা বাচ্চাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ।
আজ এই ব্যতিক্রমধর্মী উৎসবে অংশ নিতে রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ প্রাঙ্গনে শিক্ষক,শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ঢল নামে। আগত শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সী মানুষ চেনা-অচেনা এত ফল ও খাবারের সমাহার দেখে ছিল অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত।
উৎসবের প্রধান অতিথি প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সম্মানিত সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মাজহারুল হক বলেন, এখানে এমন অনেক ফল ও খাবার দেখেছি যা জীবনে প্রথমবার দেখলাম। তাছাড়া বিভিন্ন দেশীয় ফল ও হারাতে বসা গ্রামীণ খাবার দেখে মন আনন্দে ভরে গেল।
মনে হলো, ফিরে পেলাম সেই শৈশব, হারানো সেই রঙিন দিনগুলো।এই উৎসব আয়োজনের উদ্যোক্তা রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ লে. কর্নেল রেজাউল
করিম বলেন, এই উৎসব আয়োজনের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে।
দেশীয় খাবার ও ফল খাওয়ার উপকারিতা ছড়িয়ে দিতে এবং এগুলোর উপকারিতা জানাতে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক নিয়ে আমাদের এই ব্যতিক্রমী আয়োজন। এই উৎসবে আগত দর্শনার্থীরা ভেজালমুক্ত ফল ও বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী দেশীয় খাবারের স্বাদ আস্বাদনের সুযোগ পাবে।
এছাড়া যেসব ফল ও দেশীয় খাবার অপ্রচলিত বা বিলুপ্তির পথে তাও দেখার সুযোগ হচ্ছে এই উৎসবে। বিদেশি ফলের তুলনায় আমাদের দেশীয় ফলগুলো সহজলভ্য, ফরমালিনমুক্ত ও পুষ্টিগুণের দিক থেকে অত্যন্ত সমৃদ্ধ।
পাশাপাশি গ্রামগঞ্জের বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় খাবারগুলো দেখে ও খেয়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা ফাস্টফুডের চাইতেও মজাদার দেশি খাবারের স্বাদ আস্বাদনে আগ্রহী হবে।সকলকে বিদেশি ফল ও ফাস্টফুড খাবারের পরিবর্তে দেশীয় ফল ও খাবারে আগ্রহী হতে উৎসাহিত করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যদি স্বনির্ভর, আধুনিক ও উন্নত জাতি গড়তে চাই তাহলে প্রয়োজন দেশপ্রেম। এই
দেশপ্রেম শিক্ষার্থীদের মাঝে জাগরিত করতে দেশীয় মজাদার খাবার ও বৈচিত্রময় দেশীয় ফলের স্বাদ আস্বাদন প্রয়োজন।
ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহনে দেশীয় খাবার ও ফল বিষয়ক বিতর্ক, কুইজ ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল উপস্থাপনায় উৎসাহ সৃষ্টি করবে। এই আয়োজন শিক্ষার্থীদের দেশীয় খাবার ও ফল সম্পর্কে জানতে উৎসাহী ও আগ্রহী করে তুলবে এবং বিদেশি খাবার ও ফাস্টফুড বর্জনে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।