মোঃ মিঠু মিয়া গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধিঃ
গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী খাদ্য গুদাম থেকে ১৯৯ মেট্রিক টন চাল ও গম এবং খালি বস্তুা চুরি যাওয়ার ঘটনায় তদন্তে প্রমানিত হওয়ার পরও সেই খাদ্য কর্মকর্তার কোন বিচার না হওয়ায় এবং এর পিছনের মূল হোতাদের বিচারের আওতায় না আনায় জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তাদের দাবী এতো বড় একটি ঘটনা ঘটার পরও প্রশাসন সেই কর্মকর্তা কিংবা তাদের পিছনের মূল হোতাদের এখনও পযর্ন্ত গ্রেপ্তার না করায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এখানে স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, এ চাল চুরি করে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, পলাশবাড়ী সরকারি খাদ্য গুদাম থেকে ১৩১ মেট্রিক টন চাল,৬৮ মেট্রিক টন গম ও ৩৪ হাজার ৯২৬ টি খালি বস্তুার হদিস মিলছে না। এঘটনায় খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি)আব্দুল্লাহ আল মামুন সিদ্দিককে অভিযুক্ত করে পলাশবাড়ী থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন বতর্মান উপজেলা
খাদ্য নিয়ন্ত্রক নাজমুল হক। সেসময় ঘটনার তদন্তে গাইবান্ধা সদর সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক শাকিব রেওয়ানকে আহবায়ক করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল । কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন,জেলা সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবু হেনা মোস্তফা কালাম,গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুস সোবহান ও গাইবান্ধা খাদ্য পরিদর্শক আল আউয়াল। উক্ত কমিটির সদস্যরা চাল,গম ও বস্তুা উধাওয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ২০২৪ সালের ৬ জুন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ মো.মিজানুর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছিলেন। উক্ত কমিটি গত ৩ জুন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে দেখা যায়, পলাশবাড়ী উপজেলা খাদ্য গুদাম থেকে ১৩১ মেট্রিক টন চাল,৬৮ মেট্রিক টন গম ও ৩৪ হাজার ৯২৬ টি খালি বস্তুার হিসাব মিলছে না।প্রাথমিকভাবে তারা চাল ও গম চুরির ঘটনাটি ধরা পান। তাদের ধারণা ওই পরিমান খাদ্যশস্য ও সামগ্রী তছরুপ করা হয়েছে। এর পরপরই জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের নির্দেশে বতর্মান পলাশবাড়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নাজমুল হক স্থানীয় থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। মন্তব্যেয় জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো.মিজানুর রহমান বলেছিলেন, খাদ্য বিভাগের মহাপরিচালকের এক আদেশে সেই দৃর্নীতিবাজ ওসিএলএসডি আব্দুল্লাহ আল মামুন সিদ্দিককে স্ট্যান্ড রিলিজ করে সিলেট বিভাগে যোগদানের নির্দেশ দেন। গত ১৯ মে তার কর্মস্থলে যোগদানের কথা।
পলাশবাড়ী থানার ওসি তদন্ত লাইসুর রহমান জানিয়েছিলেন,প্রাপ্ত অভিযোগটি দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)তদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরাও মনে করি, বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া জরুরি।
সরকারি খাদ্যগুদামের চাল চুরি বা আত্মসাতের ঘটনা নতুন নয়। আগেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। গত মে মাসে চট্টগ্রামের দেওয়ানহাট সেন্ট্রাল সাপ্লাই ডিপো (সিএসডি) থেকে সরকারি চাল গুদামে নেওয়ার আগেই তা চুরির ঘটনা ঘটে। এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় খাদ্য কর্মকর্তার জিম্মায় থাকা সিলগালা করা গুদাম থেকে ১ হাজার ১২৪ বস্তা সরকারি চাল চুরি হয়। বস্তুত এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। অবশ্য চুরি হওয়া অনেক চাল জব্দ করা হয়েছে। চুরিতে জড়িত থাকার অভিযোগে কাউকে কাউকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। মামলা পর্যন্ত করা হয়েছে। কিন্তু সরকারি গুদামের চাল, এমনকি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল চুরি বন্ধ হচ্ছে না। প্রশ্ন হলো, শত শত টন চাল চুরি হয় কীভাবে? বস্তুত একশ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশেই চুরি হয় চাল। সরকারি খাদ্যগুদামের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপকর্মের বিষয়টি বহুল আলোচিত। কাজেই এ দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নজরদারিতে রাখা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন সচেতন নাগরিকেরা।
চালসহ দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের যখন নাভিশ্বাস উঠছে, তখন আমদানি করা চাল চুরি বা আত্মসাতের ঘটনাগুলো হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। সরকারি খাদ্যগুদামের চাল চুরি কঠোরভাবে রোধ করতে হবে। এ ধরনের ঘটনার নেপথ্যে যারা থাকে, তাদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। পলাশবাড়ী সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে চাল চুরির ঘটনার ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য। আমরা আশা করব, তদন্তে এ ঘটনায় জড়িতরা চিহ্নিত হবে এবং তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক এসএম পারভেজ
মোবাইল: +8801716159137
Mail: [email protected]