মোঃ আরিফুর রহমান মামুন পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগে উপাচার্যসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন ইসরাত জাহান অনি নামে এক ভুক্তভোগী।মঙ্গলবার পটুয়াখালী সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলাটি করা হয়। আদালত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সমন নোটিশ ইস্যু করেছেন।
বাদী পক্ষের আইনজীবী হুমায়ূন কবির বাদশা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আমার বাদী (ভুক্তভোগী) ২৭ ফেব্রুয়ারি আদালতে মামলা করেন এবং বিজ্ঞ আদালত সমন নোটিশ ইস্যু করেছেন।’
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন–বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও রিজেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত ও রেজিস্ট্রার (অ. দা.) অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসু, ট্রেজারার অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান।
মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর সেকশন অফিসার পদে একজন ও ২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর তিনজনসহ অন্যান্য পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের দপ্তর।
সেকশন অফিসার পদের জন্য ঢাকার বাসিন্দা ইসরাত জাহান অনি (মামলার বাদী) আবেদন করেন। ফলে ২০২৩ সালের ২ নভেম্বর বাদীকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হলে তিনি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে সাক্ষাৎকার দেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষক–কর্মকর্তা পদে বাছাইয়ের জন্য একাধিক কমিটি কমিটি গঠন করে। যা বিধিবহির্ভূত বলে বিবরণে উল্লেখ করা হয়।
আর নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগ বোর্ড কমিটির চেয়ারম্যান ভিসি হওয়ার কথা থাকলেও চেয়ারম্যান হন ট্রেজারার মোহাম্মদ আলী এবং রেজিস্ট্রার কামরুল ইসলামকে বাদ দিয়ে রেজিস্ট্রার (অ. দা.) সন্তোষ কুমার বসুকে সদস্যসচিব এবং রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক পূর্ণেন্দু বিশ্বাসকে সদস্য করা হয়।পরে ২০২৩ সালের ১,২, ৪ ও ৭ নভেম্বর নিয়ম বহির্ভূতভাবে দুটি বাছাই বোর্ড কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক স্বদেশ চন্দ্র সামন্তের ছেলে শাওন চন্দ্র সামন্ত তনু, উপ-রেজিস্ট্রার জসিম উদ্দিন বাদলের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা, পবিপ্রবি কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি সাইদুর রহমান জুয়েলের ভাই মোঃ আরিফুর রহমান পিয়েল, শাখা ছাত্রলীগের সম্পাদক মেহেদী হাসান তারেকের ভাই মো. হাফিজুর রহমান, দুমকি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালামের ছেলে তানভীর হাসান স্বাধীন ও জেলা যুবলীগের সম্পাদকের স্ত্রী তাকছিনা নাজনীনকে সুপারিশ করে। ২ ডিসেম্বর ২৩ রিজেন্ট বোর্ডের সভায় উপস্থাপনের মাধ্যমে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয় এবং সেকশন অফিসার পদে বিজ্ঞপ্তিতে ৪ জন নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও বাছাই বোর্ড ৬ জনকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে। পরে ৩ ডিসেম্বর নিয়োগদের ডাক্তারি পরীক্ষার কথা থাকলেও ওই দিনই তারা যোগদান করেন।
বিবরণে আরও বলা হয়, সেকশন অফিসারসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ব্যাপক অনিয়ম ও টাকা লেনদেনের গুঞ্জন রয়েছে। এ প্রক্রিয়ার কারণে মামলার বাদী ইসরাত জাহান অনি উপযুক্ত প্রার্থী হয়েও নিয়োগ বঞ্চিত হয়েছেন। এজাহারে সেকশন অফিসারসহ অন্যান্য পদের নিয়োগ বাতিল করে পুনরায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার আবেদন জানানো হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পবিপ্রবির রেজিস্ট্রার (অ. দা.) অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসু এ প্রতিনিধিকে বলেন,মামলা হয়েছে কি না বলতে পারব না, এখনো কোন কাগজপত্র পাইনি।’বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত বলেন,রেজিস্ট্রার সাহেবের কাছে শুনেছি মামলা হয়েছে, তবে এখনো কোনো কাগজ পাইনি। মামলা হলে অবশ্যই অফিশিয়ালি ফেস (মোকাবিলা)করব।এর আগে ২৭ ডিসেম্বর ২৩ পবিপ্রবিতে নিয়ম বহির্ভূতভাবে উপাচার্যের ছেলেসহ ৫৮ জনকে নিয়োগের বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। পরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ১৪ জানুয়ারি ২৪ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা (মাউশি) বিভাগের উপসচিব স্বাক্ষরিত এক পত্রে এ তথ্য জানা যায়।এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৮ জানুয়ারি ২৪ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটিতে ইউজিসির সচিব ফেরদৌস জামানকে আহ্বায়ক ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উপ পরিচালক মোঃ আমিরুল ইসলাম শেখকে সদস্যসচিব এবং অর্থ ও হিসাব বিভাগের উপ পরিচালক মো. আব্দুল আলিমকে সদস্য করা হয়েছে।।#
সম্পাদক ও প্রকাশক এসএম পারভেজ
মোবাইল: +8801716159137
Mail: [email protected]