দৈনিক একাত্তর কণ্ঠ রিপোর্টঃ
সর্ষের মধ্যে ভূত ' কথাটি আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় সর্বপ্রচলিত একটি আপ্ত বাক্য। অর্থাৎ ভূত তাড়ানো হয় যে সর্ষ দিয়ে, সেই সর্ষের মধ্যেই যদি ভূত থাকে বা ভর করে তাহলে পরিস্থিতি কি দাঁড়ায় !? কিংবা ফসলের ক্ষেত রক্ষার জন্য যদি বেড়া দেয়া হয়, সেই বেড়া-ই যদি ফসলের ক্ষেত খেয়ে ফেলে তাহলে অবস্থাটা হবে কি ?! বা 'রক্ষক যদি ভক্ষক' হয় তাহলে সমাজ-সভ্যতার পরিস্থিতি কোন্ পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াবে, একবার ভেবে দেখবেন কি ? তেমনি একটি লোমহর্ষক অথচ ভয়াবহ পরিস্থিতি দীর্ঘ প্রায় দুই বছর যাবত বিরাজ করছে চাঁদপুর জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের অভ্যন্তরে। এহেন চাঞ্চল্যকর ঘটনা জেলা সদর, ৮ উপজেলাসহ সর্বত্র চাউর হয়ে পড়ায় থলের বিড়ালের ন্যায় ধীরে ধীরে বেরিয়ে পড়ছে চিহ্নিত মাদক কারবারিদের সাথে চাঁদপুর জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের অভ্যন্তরের ত্রিরত্নরূপী তিন পেটি কর্তা যথাক্রমে সেন্টু রঞ্জন নাথ, মোহাম্মদ পিয়ার হোসেন ও মোঃ সাইফুল ইসলাম পরস্পর গোপন যোগসাজসে লক্ষ লক্ষ টাকা মাসোয়ারা হাতিয়ে নেয়ার চমকপ্রদ নানা অপ্রকাশিত গোপন রহস্যের কায়-কারবারের জমজমাট সব বাণিজ্য। এর ফলে চাঁদপুর জেলা মাদকের অভয়ারণ্যে পরিণত হয় এবং প্রতিনিয়ত দেদারসে ফ্রি-স্টাইলে মাদক কেনা ও বেঁচা এবং পাচার অব্যাহত থাকে। বস্তুতঃ এসব কারণেই চাঁদপুর জেলা মাদকের স্বর্গরাজ্য হিসেবে গড়ে উঠে।
সংশ্লিষ্ট দপ্তরের এই তিন কর্তার গোপন সহযোগিতায় চাঁদপুরের চিহ্নিত মাদক কারবারিরা নির্ভয়ে-নির্দ্বিধায় দেদারসে ফ্রি-স্টাইলে মাদক কেনা ও বেঁচা এবং পাচার করেছে অব্যাহতভাবে। চিহ্নিত মাদক কারবারিরা ওই তিন ব্যক্তির কাছ থেকে গোপনে আগেভাগে অভিযানের খবর পেয়ে যাওয়ায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় চাঁদপুরসহ চাঁদপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশের কোন অভিযানই শেষ পর্যন্ত আর সফল হয়নি। এসব অভিযানের গোপন তথ্য উল্লেখিতরা চাঁদপুরের চিহ্নিত মাদক কারবারিদের পূর্ব থেকে জানিয়ে দেয়ার ফলে চিহ্নিত মাদক কারবারীদের মালে-বর্গায় ধরা কোনভাবেই ধরা সম্ভব হয়নি। এর বিনিময়ে উল্লিখিত তিন কর্তা গোপনে সংশ্লিষ্ট ও চিহ্নিত মাদক কারবারীদের কাছ থেকে প্রতিমাসে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছে। পক্ষান্তরে তারা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন না করে স্বীয় বিভাগের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার পাশাপাশি চাঁদপুর জেলাব্যাপী মাদক কেনা ও বেঁচা এবং পাচার সহজীকরণে বিশেষভাবে সহযোগিতা করে দেশ ও জাতির সাথে বেইমানি করায় দুঃসাহস পেয়েছে। গোপন সহযোগিতার মাধ্যমে সর্ষের মধ্যে ভূতের অবস্থান নেয়ার এসব ভয়াবহ পরিস্থিতির খবর সর্বত্র ফাঁস হয়ে পড়ায় নড়ে চড়ে বসে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন, চাঁদপুর জেলা পুলিশ প্রশাসন, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ এবং চাঁদপুর জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়, চট্টগ্রাম জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ও সেবা বিভাগ। খবর সংশ্লিষ্ট একাধিক বিশ্বস্ত ও গোপন সূত্রের।
একটি বিশ্বস্ত ও গোপন সূত্র জানায়, প্রায় দুই বছর পূর্বে চাঁদপুর জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক এ.কে.এম দিদারুল আলম হবিগঞ্জ জেলায় বদলি হওয়ার পর পর অত্র কার্যালয়ের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণভার গোপনে ও প্রকাশ্যে অলিখিতভাবে নেন বহুল আলোচিত ও সমালোচিত ওই দুই কর্মকর্তা মোঃ পিযার হোসেন ও মোঃ সাইফুল ইসলাম। তারা চাঁদপুর জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের তৎকালীন সহকারী পরিচালক ইমদাদুল ইসলাম মিঠুনকে প্রভাবিত করে ভুল তথ্য দিয়ে মাসি-পিসির ঘুম পাড়িয়ে রাখে। যার ফলে তসেসময় খুব একটা বড় ধরনের সফল অভিযান পরিচালিত হতে দেখা যায়নি। সাবেক সহকারি পরিচালকও ভালো মানুষ ছিলেন। তাঁর সহজ- সরলতার সুযোগে এবং তাঁর অজ্ঞাতসারে ওই তিন কর্মকর্তা চিহ্নিত মাদক কারবারিদের সাথে চাঁদপুর জেলা শহরসহ আট উপজেলাব্যাপী সিন্ডিকেট বাণিজ্য গড়ে তোলে। এর ফলে দীর্ঘ প্রায় দুই বছর যাবত চাঁদপুর জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের উক্ত দুই কর্মকর্তার সাথে চাঁদপুরের সকল চিহ্নিত মাদক কারবারীদের বিশেষ সখ্যতা গড়ে ওঠে। তারই ধারাবাহিকতায় উভয় পক্ষের মধ্যে চলতে থাকে মাদক কারবারের জমজমাট বাণিজ্য। বিশেষ মাধ্যমে খবর নেয়া হলে জানা যাবে, সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের উক্ত কর্মকর্তারা বর্তমানে কি পরিমান স্থাবর-অস্থাবর, সম্পদ-সম্পত্তিসহ অর্থ-বৃত্তের মালিক !?
সূত্র জানায়, চাঁদপুর জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিদর্শক সেন্টু রঞ্জন নাথ, উপ-পরিদর্শক মোঃ পিয়ার হোসেন ও সহকারি উপ- পরিদর্শক মোঃ সাইফুল ইসলাম; এদের মধ্যে পিয়ার হোসেন ও সাইফুল ইসলাম যথাক্রমে দীর্ঘ ৪ বছর এবং ৫ বছর যাবত চাঁদপুর জেলায় কর্মকালীন থাকায় বড় বড় চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক ও বিশেষ সখ্যতা গড়ে তোলে। সেইসাথে মাদকের বড় বড় গডফাদারদের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি করে মাদকের স্বর্গরাজ্য গড়ে তোলে। সাবেক সরকারি পরিচালককে বোকা বানিয়ে অর্থাৎ ভুল তথ্য দিয়ে চিহ্নিত মাদক কারবারিদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা মাসোয়ারা হাতিয়ে নিয়ে মাদকের স্বর্গরাজ্য গড়ে তোলে। সরকারি পরিচালক এ.কে.এম দিদারুল আলম যোগদানের পর হতেই মাদকের বিরুদ্ধে গড়ে তোলেন দুর্বার আন্দোলন এবং সাঁড়াশি ও চিরুনি অভিযান অব্যাহত রেখে চলেছেন। এতে চাঁদপুরের চিহ্নিত ও বড় বড় মাদক ব্যবসায়ী গা ঢাকা দিতে বাধ্য হয়।
দিদারুল আলমের যোগদানের পর হতেই আবার মাদকবিরোধী অভিযান বৃদ্ধি পায় এবং তাঁর একের পর এক সাঁড়াশি ও চিরুনি অভিযানে চিহ্নিত মাদক কারবারিরা বেসামাল হয়ে পড়ে। তাঁর দুই মাস কার্যকালীন সময়ে বড় বড় এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাঁড়াশি ও চিরুনি অভিযান পরিচালিত হয়।
সম্পাদক ও প্রকাশক এসএম পারভেজ
মোবাইল: +8801716159137
Mail: [email protected]