নাজমুল হাসান বিশেষ প্রতিনিধিঃ
বগুড়ার ধুনট উপজেলার গোসাইবাড়ি বাজার এলাকার গুয়াডুহরি গ্রামে অবস্থিত গোসাইবাড়ি মহিলা কলেজ। ১৯৯৯ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার দুই বছরের মাথায় বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসলে ২০০২ সালে কলেজটির কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয়। তারপর থেকে কলেজটি বেশ কয়েক বছর ধারাবাহিক ভাবে সুনামের সাথে পরিচালিত হতে থাকে। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কলেজটি কিছুটা গতি হারিয়ে নানা সংকটে ধুকে ধুকে চলতে থাকে। এভাবে বছর ২ পেরিয়ে গেলে ২০০৮ সালে আবারও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে কলেজটি আরও স্থবির হয়ে পড়ে ও রাজনৈতিক অজ্ঞাত কোন কারণে বন্ধ হয়ে যায়। এরপরেও উন্নয়ন মূলক কোন কাজ থেমে থাকেনি। ২০১১-১২ অর্থ বছরে ৯০ হাজার টাকা ব্যায়ে নির্মিত হয় কলেজের সিমানা প্রাচীর ও গেট। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে জেলা পরিষদের অর্থায়নে ১ লক্ষ টাকা ব্যায়ে কলেজে প্রবেশের ইটের সোলিং রাস্তা করা হয়। যা ২০১৭ সালে ২৫ সেপ্টেম্বর তৎকালিন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডাঃ মকবুল হোসেন উদ্ধোধন করেন। এরপর থেকে ২৫ বছর অবজ্ঞা-অবহেলায় পার করে ধ্বংসের মুখে এই কলেজটি। কলেজটি বন্ধ হওয়ার পর নিরিবিলি স্থান পেয়ে লোক চক্ষুর আঁড়ালে মাদকসেবীরা এখানে গড়ে তোলে আখড়া। অনেকে মনে করেন উঠতি বয়োসি অনেকে এই কলেজ মাঠেই মাদক সেবনের প্রথম সুচনা করে। এসে কলেজের শহীদ মিনারটি দেখলে মনে হবে এটা কোন এক সময়ের রণপ্রান্তর।জানা যায়, ২০০৬ সালের কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন ওই কলেজের ইসলাম শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম। তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠে। তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই একের পর এক মনগড়া সিদ্ধান্ত, অদূরদর্শিতা ও নানা অনিয়মের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই তিনি বিতর্কিত ছিলেন। গোসাইবাড়ি মহিলা কলেজের ছাত্রী ভর্তি, পাঠদানসহ অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক সকল কার্যক্রম সম্পূর্ণরুপে বন্ধ রেখে নিজে গা ঢাকা দেন। এলাকাবাসী জাহাঙ্গীর আলমকে অপসারণ করে নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ ও পুনরায় কলেজটি চালুর দাবি জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা হলেও বিএনপি সরকারের আমলে কলেজটি গতি পায়। বিএনপি সরকারই কলেজের কার্যক্রম পুরোদমে চালু করে। এরপর বিএনপির ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হলে নিয়মানুযায়ী তত্বাবধায়ক সরকার দেশের দায়িত্ব নিলে কলেজটির গতি কিছু টা কমলেও শিক্ষার্থীরা নিয়মিত পাঠদান করতো। কিন্তু ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কলেজটি কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ১৬ বছর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকায় আর কলেজটির কার্যক্রম শুরু হয়নি। গত ৫ আগষ্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে এলাকাবাসী আশাবাদী কলেজটি হয়তো আবার আলোর মুখ দেখবে। অন্তবর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীনই বন্ধ থাকা কলেজটি পুনরায় চালু করার দাবি স্থানীয়দের।
সরেজমিনে দেখা যায়, গোসাইবাড়ি মহিলা কলেজটি বর্তমানে জরাজীর্ণ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কলেজের সামনের সাইনবোর্ডে বড় করে লেখা রয়েছে ‘গোসাইবাড়ি মহিলা কলেজ’। এই লেখাটাই একমাত্র বোঝার উপায় যে এখানে একটি কলেজ ছিল বা আছে। কলেজটির কক্ষের সব কিছু প্রায় ভেঙে পড়েছে। তাছাড়া কক্ষে কক্ষে জন্ম নিয়েছে নানা আগাছা। দীর্ঘদিন কার্যক্রম না থাকায় চুরি হয়ে গেছে চেয়ার টেবিল সহ অধিকাংশ আসবাবপত্র। কলেজের পরিত্যক্ত কক্ষ এখন মাদকসেবীদের নিরাপদ আস্তানায় পরিণত হয়েছে। কক্ষ থেকে কিছুক্ষণ পরপরই বিভিন্ন বয়সী মাদকসেবীদের বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। দিনে রাতে নিয়মিত চলে মাদক সেবন ও অনৈতিক কাজ। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, প্রত্যন্ত পল্লী গ্রামে অবস্থিত কলেজটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের সন্তানদের অনেক কষ্ট করে অন্য জায়গায় লেখাপড়া করতে হচ্ছে। ছেলেরা দূরে গিয়ে পড়ালেখা করলেও বন্ধ হয়ে গেছে মেয়েদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ। তাই ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা চিন্তা করে অবিলম্বে অন্তবর্তীকালীন সরকারের হস্তক্ষেপে কলেজটির কার্যক্রম আবারও শুরু করা উচিত। স্থানীয় এক শিক্ষানুরাগী বলেন, কলেজটি হওয়ার পরে এই এলাকার মেয়েরা এখানে লেখাপড়া করেছে। সেই সময়ে পড়াশোনাও ভালো ছিল। সাত আট বছর পর কলেজটি বন্ধ হয়ে গেল। কলেজটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই এলাকার মেয়েদের গ্রাম থেকে শহরে গিয়ে পড়াশোনা করতে হচ্ছে। এখান থেকে প্রতিদিন যাতায়াতে নানা সমস্যা পোহাতে হয় তাদের। কলেজটা থাকলে এমন সমস্যায় পড়তে হতো না। ফলে নিম্নবিত্ত অনেক পরিবারের মেয়েদের এতদূর গিয়ে লেখাপড়া করাতে চায় না অভিভাবকরা। আমরা চাই কলেজটি আবারও চালু হোক। কলেজটি চালু করলে আমাদের এলাকার মেয়েদের আর দূরদূরান্তে পড়াশোনার জন্য যেতে হবে না।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খৃষ্টফার হিমেল রিছিল বলেন, আমি এ উপজেলায় কিছুদিন আগে এসেছি। স্থানীয় কয়েকজন কলেজের বিষয়টি নিয়ে আমার কাছে এসেছিল। তাদের সাথে আলোচনা করে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক এসএম পারভেজ
ফ: +8801716159137
Mail: [email protected]