আলাউদ্দিন মন্ডল রাজশাহী প্রতিনিধিঃ
রাজশাহীর মোহনপুরে বিধবা নারীর জমি জবর দখল ও কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বাড়িতে চুরির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এবিষয়ে ভুক্তভোগী নারী চারজনের নাম উল্লেখ করে মোহনপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ পেয়ে মোহনপুর থানা পুলিশ এসআই আবু জাহেদ শেখ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার রায়ঘাটি ইউপির হাটরা চান্দপাড়া গ্রামের আঃ রহমান ২৩ বছর আগে বিয়ে করেন মোছাঃ আসরুপি বিবিকে। বিয়ের পরে ২০০৫ সালে তিনি তার স্ত্রী আসরুপি বিবি (৩৭) কে চান্দপাড়া মৌজার জেএল নম্বর ১৮, প্রস্তাবিত খতিয়ান নং ১৮০, আর এস দাগ নম্বর ১৩৭, পরিমান ১১ শতাংশ জমি রেজিষ্ট্রেশন করে দেন। ওই জমিতে ৭টি আম, ২টা ডাব, ৬/৭ টা মেহগুনিগাছ ও কাঠালসহ অসংখ্য ফলদ গাছের নার্সারি ছিল।
বিধবা ওই নারী জমিটি ভোগ দখলে থাকা অবস্থায় জমিটি খুন জখমের হুমকি দিয়ে
নিজেদের দখলে নেন একই এলাকার মৃত জিতনের ছেলে বাবু (৩৫) ও তার স্ত্রী
জাকিয়া (৩২), মৃত মিঠনের ছেলে মোঃ কাবুল (৫০) ও তার স্ত্রী ছকিনা (৪০) সহ তার লোকজন।
দখলবাজরা জমিতে রোপন করা গাছের ফল বিক্রি ও জমি টেন্ডার ও নার্সারীর গাছ বিক্রি করে ওই জমি থেকে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে।
তারা এলাকার দুর্ধর্ষ ও খারাপ প্রকৃতির লোক হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস পায়না। দখলবাজ বাবু বিধবা ওই নারীকে মোবাইল ফোনে বিভিন্ন ধরনের লোভ দেখায় এবং তার সাথে শারিরীক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য কুপ্রস্তাব দেয়।
প্রতি নিয়ত বাবুর অনৈতিক প্রস্তাবে দিক পশ্চিম হারিয়ে জমিটি ফেরত পাবার আশায় ওই নারী রায়ঘাটি ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
অভিযোগ পাওয়ার পর চেয়ারম্যান নোটিশ জারি করলে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে বাবু ও তার লোকজন। চেয়ারম্যানের নোটিশে স্বাক্ষর না করে অভিযোগ উঠিয়ে নিতে নানা প্রকার হুমকি দিতে থাকে বাবু, কাবুল ও তার বাড়ির লোকজন।
বাবু বিধবা ওই নারীকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রস্তাব দেয় তার সাথে ওই নারী শারিরীক সম্পর্কে জড়ালে এবং তিন শতক জমি বাবুর নামে রেজিষ্ট্রি করে দিলে সে জমিটির দখল ছেড়ে দিবে। ওই বিধবা নারী বাবুর প্রস্তাবে রাজি না হলে বিভিন্ন ধরণের ভয়ভীতিসহ ভবিষ্যতে অনেক ক্ষতি করবে জানায় বাবু।
বিধবা নারীর দখল হওয়া জমিটি উদ্ধার করতে গত ২৩ মে ২৩ ইং তারিখে ইউএনও'র দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন। সেখানে কোন প্রতিকার না পাওয়ায় ওই নারী বাবু ও তার স্ত্রী জাকিয়া, কাবুল ও তার স্ত্রী ছকিনার নামে মোহনপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন।
অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উভয় পক্ষকে থানায় আসতে বলে বিধবা ওই নারী থানায় আসলেও বাবু গং রা থানা পুলিশকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে পুলিশের ডাকেও সাড়া দেয়নি। এঘটনায় গত ৯ জুন ২৩ মোহনপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়রী লিপিবদ্ধ হয়েছে।
এদিকে ওই নারী গত ৭ জুলাই ২৩ শুক্রবার বাড়িতে তালা লাগিয়ে আত্বীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গেলে গত ১১ জুলাই ২৩ মঙ্গলবার আত্মীয়ের বাড়ি অবস্থানকালে স্থানীয়দের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানতে পারে তার বাড়ির তালা খোলা। সংবাদটি জানার পর সে বাড়িতে ফিরে আসে এবং দেখতে পায় তার বাড়ির তালা খোলা।
ঘরে প্রবেশ করে দেখে কাঠের ওয়ারড্রফের ড্রয়ার খোলা তাতে রাখা নগদ =৩০,০০০/- (ত্রিশ হাজার) টাকা ও ৮ (আট) আনি ওজনের স্বর্ণের চেইন যার আনুমানিক মূল্য =৪৩,০০০/-(তেতাল্লিশ) হাজার টাকা চুরি হয়েছে। এবিষয়ে মোহনপুর থানায় আবারো দুইজনের নাম উল্লেখ করে একটি লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী ওই বিধবা নারী।
ভুক্তভোগী ওই বিধবা নারী জানান, আমার নিজ নামে খারিজ করা একমাত্র জমিটি বাবু, কাবুল তার লোকজন নিয়ে জোর করে দখল করে নিয়েছে। বাবু আমাকে বলেছে তার সাথে রাত কাটালে এবং ৩ শতক জমি তাকে রেজিস্ট্রি করে দিলে সে জমিটি ছেড়ে দিবে।
তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এবং অভিযোগ করায় সে ও তার লোকজন আমাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিচ্ছে। তারাই আমার বাড়িতে চুরি করেছে। স্বামীর দেওয়া উপহারের জমিটি উদ্ধার করতে আমি বিভিন্ন অফিসের দ্বার দ্বারে ঘুরছি। অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও আমার জীবনের নিরাপত্তায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ আমি সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এবিষয়ে রায়ঘাটি ইউপি চেয়ারম্যান মো: বাবলু হোসেন জানান, একজন বিধবা নারী তার জমি দখল সংক্রান্ত একটি অভিযোগ করেছিল। বিবাদীদের নোটিশ দিলে তারা স্বাক্ষর করেনি এবং পরিষদে হাজির না হওয়ায় তাকে থানায় অভিযোগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
মোহনপুর থানা কর্মকর্তা (ওসি) মোহা. সেলিম বাদশাহ বলেন, ওই বিধবা নারীর বাড়িতে চুরি ও জমি দখল সংক্রান্ত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক এসএম পারভেজ
মোবাইল: +8801716159137
Mail: [email protected]